(All) সুফিবাদের বই Pdf Download
সুফিবাদের বই পিডিএফ: মুসলমানদের মধ্যে মারাত্মক পরিবর্তন
যেহেতু আমি এখানে আল্লাহ পাকের হুকুম পৌছানোর জন্য এসেছি, সেহেতু দুনিয়ার প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করা আমার কোন দরকার ছিল না। কিন্ত কিআর করা যাবে, আমাদের ভাইদের মন-মানসিকতাই এমন হয়ে গেছে যে, যে সময় পর্যন্ত না তাদের সামনে দ্বীনের কথার মধ্যে দুনিয়ার চাটনী লাগিয়ে পেশ করা হবে, সে সময় পর্যন্ত তারা দ্বীনের কথার প্রতি মনোযোগই দেন না। কাজেই অধিকাংশ সময় খালেস দ্বীনের তলবকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখা হয়। যদি কোন মৌলবী ছাহেব বানানো হয় এবং আপত্তি উত্থাপন করে এ কথা বলা হয় যে, মৌলবীদের তো শুধু আখিরাতই মনে আছে। অন্যান্য জাতি উন্নতি করে কোথা থেকে কোথায় পৌঁছে গেল, মুসলমান জাতিই দিন দিন অধঃপতনের দিকে ১০ আত্মার প্রশান্তি যাচ্ছে। অথচ এ সকল মৌলবীদের এ ব্যাপারে কোন আলোচনা নেই।
তারা তো শুধু এক আখিরাতকেই মুখস্থ করে নিয়েছে। এটা এ সকল (সাধারণ) মুসলমানের: অবস্থা যাদের আকীদা ভালো। তা না হলে মুসলমানদের মধ্যে এমনও অনেক লোক আছে, যারা পরিচ্কার ভাষায় বলে ফেলে যে, আমাদের তো আখিরাতের ব্যাপারেই সন্দেহ আছে! অথচ এরাও নিজেদেরকে মুসলমান বলে পরিচয় দিয়ে থাকে। জানি না ইসলামকে এরা কি জিনিস মনে করে যে (এদের দৃষ্টিতে) কুফরও ইসলামেরই একটা অংশ।
আখিরাত সম্পরকে ভ্রান্ত ধারণা
এ সকল লোকদের কথা ভিন্ন, কারণ সাধারণ মানুষও এদেরকে মুসলমান মনে করেন না। কিন্তু যারা আখিরাতকে স্বীকার করেন তাদের অবস্থাও তো এর চেয়ে ভাল নয় যে, তারা আকীদার পর্যায়ে আখিরাত ও তৎসংগ্রিষ্ট বিষয়াবলীকে হালকা মনে করেন না ঠিক, কিন্তু দৈনন্দিন কাজ কারবারে অবশ্যই হালকা মনে করেন। অর্থাৎ দুনিয়ার (কাজ-কর্মের) প্রতি তারা যেরূপ গুরুত্বারোপ করে থাকেন, আখিরাতের প্রতি তেমনটি করেন না। দুনিয়ার কাজের সমান গুরুত্ব দেওয়া তো দূরের কথা, তার দশ ভাগের এক ভাগ শুরুত্বও দেন না। এর চেয়ে মারাত্বক ব্যাপার হলো, এ গুরুত্বহীনতার কোন বেদনাও তাদের নেই। যদি এ মোরাত্মুক) অবস্থার প্রতি আফসোস থাকত, তাহলে, স্বীয় দুর্বলতা ও অলসতা অনুভব করতে পারত এবং হৃদয়ে এ কথার আকাংখা জাগ্রত হত যে, আখিরাতের তলব চোহিদা) অন্তরে সৃষ্টি হওয়ার মত কোন অবস্থা যেন হয়। এমন হলে এটাকে গনীমত মনে করা যেত। এতে করে কোন না কোন সময় আখিরাতের প্রতি গুরুত্বারোপ করার সুযোগ আসত।
কিন্ত আফসোস তো এজন্য হয় যে আখিরাতের প্রতি চরম উদাসীনতা এবং সেই উদাসীনতার প্রতিও মারাত্মক উদাসীনতা । এ ব্যাপারেও আমাদের কোন আফসোস নেই যে, আমরা আখিরাতের ব্যাপারে কোন চিন্তা-ফিকির করছি না। সুতরাং আখিরাতের তা’লীমের প্রতি আপত্তি উত্থাপন করা হয়, এর প্রতি কোন প্রকার শ্রদ্ধাবোধও আমাদের নেই। ধর্মের প্রতি উদাসীন লোকেরা বলে থাকে যে, মৌলবীরা তো শুধু আখিরাতই মুখস্থ করে নিয়েছে। সন্তানদেরকে আখিরাতের তা’লীম (শিক্ষা) দেওয়ার অর্থ তারা মনে করে যে, দুনিয়ার দিক দিয়ে তারা একেবারে বেকার হয়ে যাবে। আমাদের অধিকাংশের মধ্যে আখিরাত সম্পর্কে মারাত্মক রকমের একটি ভূল ধারণার সৃষ্টি হয়েছে যে, আমরা মনে করি, যে ব্যক্তি আখিরাতের চিন্তায় লাগে সে দুনিয়ার দিক থেকে একেবারে বেকার হয়ে যায়। অথচ দুনিয়ার ব্যাপারে একেবারে বিপরীত চিত্র দৃষ্টিগোচর হয়। দুনিয়া কামানোর জন্য দিবারাত্রি ডুবে আছে, দুনিয়ার কাজে লিপ্ত হয়ে দ্বীন থেকে একেবারে চরমভাবে গাফেল হয়ে আছে। কিন্তু এক্ষেত্রে কখনো একথা মনে করা হয় না যে, মানুষ দুনিয়ার কাজে লিপ্ত হয়ে ধমীয় দিক দিয়ে একবারে বেকার হয়ে যাচ্ছে।
মোটকথা, দুনিয়াকে আমরা এমন লক্ষ্যবস্ত বানিয়েছি যে, দ্বীনের প্রতি আহবানকারীরও এখন লোকদেরকে আখিরাতের চিত্তার প্রতি উৎসাহিত করার জন্য “আমলের দুনিয়াবী ফায়দার কথা বর্ণনা করতে হয়। কাজেই ইবাদাতের পরকালীর্ন ফযীলত বর্ণনা করার সময় দুনিয়াবী লাভের প্রতিও দিক নির্দেশনা প্রদ্বানংকরা উচিত, যাতে করে লোকেরা দুনিয়ার লাভের প্রতি লালায়িত হয়ে হলেও আখিরাতের প্রতি মনোযোগী হয়। যেমন শিশুদেরকে প্রথম প্রথম যখন গুলিস্তা, বৃস্তা (বিখ্যাত দুটি ফারসী কাব্যগ্রন্থ) পড়ানো হয়, তখন তাদেরকে মিষ্টির লোভ দেখান হয়, শুরুতে তারা মিষ্টির লোভেই সবক পড়ে, কিন্তু পড়তে পড়তে যখন মজা পেয়ে যায়, তখন বলে আমার সামনে থেকে মিষ্টির পাত্র সরিয়ে নিলেও, আমার গা থেকে জামা খুলে নিলেও আমি সবক বন্ধ করব না, আমাকে সবক পড়িয়ে দিতে হবে। লক্ষ্য করে দেখুন! একদিন যে ছাত্র মিষ্টির লোভে পড়াশোনা করত, তার আজ এ অবস্থ হয়েছে যে, যখনই সবক পড়ার সময় হয়, তখনই সে অত্যন্ত আগ্রহের সাথে ক্লাসে উপস্থিত হয়ে উত্তাদের নিকট মিনতি করে বলেঃ আল্লাহর ওয়াস্তে আমার প্রতি লক্ষ্য করুন! আমাকে সবক পড়িয়ে দিন।
কখনো বা উত্তাদকে খুশী করার জন্য হাদিয়া স্বরূপ মিষ্টি পেশ করে, আবার কখনো বিভিন্নভাবে উত্তাদের খিদমত করে। এক্ষেত্রে কোন কোন: সময় উত্তাদের তিরস্কার ও মারপিট নিরবে সহ্য করে এবং এতে এজন্য ১২ আত্মার প্রশান্তি আনন্দিত হয় যে, উত্তাদ তার প্রতি যথাযথ দৃষ্টি রাখছেন। ফলে সে উত্তাদের প্রতি সক্তষ্টি প্রকাশ করে তাকে মিষ্টি খাওয়ানোর বন্দোবস্ত করে থাকে।
লক্ষ্য করে দেখুন! এতো এ শিশুই যাকে মিষ্টির লোভ দেখিয়ে, খুব কষ্টে পড়ান হত, আজ তার এমন পরিবর্তন এসেছে যে, সে নিজেই মিষ্টি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে পড়তে চায়। আসল কথা হলো, এখন তার ইলম হাসিল করার প্রতি আগ্রহ জন্মেছে।
সুফিবাদ ও আত্মদর্শন pdf
এ প্রসঙ্গে আমার শৈশবের একটি ঘটনা মনে পড়ে গেল। মিরাঠের ঘটনা ! আমি যে উত্তাদের নিকট কুরআন.শরীফ হিফয করতাম, আমার আববাজান কোন কারণে তাকে বাদ দিতে চাইলেন। আমার যেহেতু কুরআনে পাক হিফয করার আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল, তাই আমি খুব কান্নাকাটি শুরু করে দিলাম। আববাজান আমাকে বুঝাতে অনেক চেষ্টা করলেন, অন্য উত্তাদ রেখে দেওয়ার কথা বললেন, ধমক দিলেন, কিন্তু আমি কোন কথাই শুনলাম না। আমি বললাম, আমি তো এ উত্তাদের কাছেই পড়ব। শেষ পর্যন্ত আব্বাজান অপারগ হয়ে চলে গেলেন। যেতে যেতে বললেন, আল্লাহই জানেন, এএকে কি খাওয়ানো হয়েছে যে, এ উত্তাদের একেবারে আসক্ত হয়ে গেছে।
মোটকথা, আববাজান হেরে গেলেন। অথচ হাফেয সাহেব এমনই রুক্ষ মেজাের ছিলেন যে, যখন আমি মৌলবী হিসেবে বেশ প্রসিদ্ধি লাভ করেছি, (যদিও সত্যিকারের মৌলবী এখনও হতে পারিনি) সে সময় একবার মিরাঠ গিয়েছিলাম এবং (আমার উত্তাদ) হাফেয সাহেবকে কুরআন শরীফ শুনাতে গিয়ে যেই না এক আয়াতের সাথে অন্য আরেক আয়াতকে পেঁচিয়ে ফেলেছি, সাথে সাথে হাফেয সাহেব রাগান্বিত হয়ে মুখের উপর এক থাপ্নড় মেরে বসলেন। আলহামদুলিল্লাহ! এতে আমি সামান্যও অস্তষ্ট হইনি। মাথা নিচু করে চুপ চাপ বসে রইলাম। সামান্য সময় পরে হাফেয সাহেবের যখন (আমার বর্তমান অবস্থার কথা) খেয়াল হলো, হাত জোড় করে আমার সামনে এসে বললেন, আমি মারাত্মক বেয়াদবী করে ফেলেছি, তুমি এত বড় আলিম! আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে মাফ করে দাও। আমি বললাম, হযরত! এসব আপনি কি বলছেন, আমি যা কিছু অর্জন করেছি সবই আপনার উসীলায়, সারাজীবনই আপনার মারার অধিকার আছে।
সুফিবাদের বই Pdf Download লিঙ্কঃ click here