বরফ গলা নদী বই Review
বইয়ের নাম : বরফ গলা নদী
বইয়ের ধরন : উপন্যাস
লেখকের নাম : জহির রায়হান
প্রকাশকাল : ১৯৯৮(১ম অনুপম সংস্করণ)
প্রকাশনা : অনুপম
প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ, Borof Gola Nodi PDF
পৃষ্ঠা সংখ্যা : ৯৫
মূল্য : ১৬০
প্রধান চরিত্র : মাহমুদ
বরফ গলা নদী বই রিভিউ
বাংলা কথাসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ একজন লেখক হলেন জহির রায়হান। জহির রায়হান একাধারে একজন ঔপন্যাসিক, নাট্যকার,চলচ্চিত্র পরিচালক,গল্পকার,কাহিনীনির্মাতা সহ ইত্যাদি। তিনি ১৯৩৫ সালের ১৯শে আগস্ট ফেনী জেলার অন্তর্গত মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সাংবাদিকতা, রাজনীতি, চিত্রপরিচালনা সহ বিভিন্ন শাখায় ছিল অসামান্য প্রতিভাধর এই লেখকের পদচারণা। মাত্র ৩৭ বছরের জীবনে তিনি বাংলা সাহিত্যকে উপহার দিয়েছেন কিছু চির স্মরণীয় লিখা যা যুগ যুগ ধরে রয়েছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। গল্প,উপন্যাস,চলচ্চিত্র সহ বিভিন্ন খাতে রয়েছে তাঁর অবদান।তাঁর রচিত বিখ্যাত উপন্যাসগুলোর মাঝে অন্যতম কয়েকটি উপন্যাস হল – শেষ বিকেলের মেয়ে, হাজার বছর ধরে, আরেক ফাল্গুন,বরফ গলা নদী ইত্যাদি। তন্মধ্যে “বরফ গলা নদী ” আমার পড়া একটি শ্রেষ্ঠ উপন্যাস।
“বরফ গলা নদী ” উপন্যাসটি ১৯৬৯ সালে উত্তরণ নামক একটি সাহিত্য পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়। উপন্যাসটির নামকরণে রয়েছে যথেষ্ট স্বার্থকতা। জহির রায়হান উপন্যাসটিতে এমন কিছু হৃদয় বিদারক কাহিনী তুলে ধরেছেন যা পড়ে সত্যিই মনে জমে থাকা বরফ গলতে শুরু করে। একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির জীবনধারা নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছেন লেখক। নিম্নে উপন্যাসটির কাহিনী সংক্ষেপ ও আমার পাঠপ্রতিক্রিয়া দেওয়া হল।
একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের জীবনযাত্রা দিয়ে শুরু বরফগলা নদী। আস্তর উঠা লাল রং এর ভাঙাচোরা দালানে বাস করে একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছে মাহমুদ নামের এক যুবক। বাবা হাসনাত আলী,মা সালেহা, এক ভাই খোকন, তিন বোন মরিয়ম, হাসিনা ও দুলুকে নিয়ে তার বাস। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কন্ঠের যুবক মাহমুদ। অভাবের সংসারে বড় হওয়া সত্তেও ছিল মাহমুদের তীব্র আত্মসম্মানবোধ। অন্যায়ের সাথে আপোষ করত না কখনোই। মাহমুদ সামান্য বেতনে চাকরি করে একটি পত্রিকা অফিসে। সারারাত প্রুফ রিডিং এর কাজ করে যেটুকু বেতন পায় সবটা দিয়ে সাহায্য করতে চায় পরিবারকে।তবুও না পাওয়ার হিসেবটাই বড় আকারে থাকে। মনে মনে বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠে সে। বড়লোকদের তীব্র ঘৃণা করে মাহমুদ। বোন মরিয়মের বিয়ে হয় মনসুর নামক এক বড়লোকের সাথে। বিয়েটা মন থেকে মেনে নিতে পারেনি মাহমুদ। অন্যদিকে পরিচয় হয় মরিয়মের বান্ধবী লিলির সঙ্গে। সব মিলিয়ে কোনোক্রমে চলছিল জীবন। কিন্তু কোনো একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্বামীর ঘর ছাড়া হল মরিয়ম। বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিলে ওই রাতেই পৃথিবী ছাড়া হয় পুরো পরিবার। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় মাহমুদ। কী সেই কারণ যার জন্য স্বামীর ঘর ছাড়া হয়েছিল মরিয়ম এবং কী কারণে পৃথিবী ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছিল পরপারে তা জানতে হলে অবশ্যই পড়তে হবে “বরফ গলা নদী “।
জহির রায়হানের এই উপন্যাসটি জুড়ে রয়েছে পাওয়া, না পাওয়ার গল্প।উপন্যাসটির প্রতিটি চরিত্র যেন জীবন্ত প্রাণ। লেখক সুনিপুনভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন প্রতিটি চরিত্রকে এবং তাদের জীবনপ্রবাহ কে। যদিও উপন্যাসটি ১৯৬৯ সালে রচিত হয়েছে,তবুও এখনো রয়েছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। আমার পছন্দের কিছু লাইন দিয়ে শেষ করব “বরফ গলা নদী” উপন্যাস টির পাঠ প্রতিক্রিয়া।
“…অতীত। বর্তমান।ভবিষ্যৎ।
ছুরি দিয়ে কেটে কেটে জীবনটাকে বিশ্লেষণ করার মতো প্রবৃত্তি না হলেও,জীবনের ক্ষণস্থায়ী মুহুর্তগুলো,টুকরো টুকরো ঘটনাগুলো স্মৃতি হয়ে দেখা দেয় মনে। সেখানে আনন্দ আছে, বিষাদ আছে। ব্যর্থতা আছে,সফলতা আছে। হাসি আছে, কান্না আছে।
অতীতের মতো বর্তমানও যেন ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো ওঠা আর পড়ার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে। ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা কেউ বলতে পারে না। “…