বই রিভিউ ও ডাউনলোড
হেমিংওয়ের নারীরা বই রিভিউ
“হেমিংওয়ের নারীরা” বইটি পড়ে লেখক ফারুক মঈনউদ্দীনের পরিশ্রম আর সাধনার কথা ভাবছিলাম। আসলে কতটা নিবেদিত হলে এমন তথ্যসমৃদ্ধ একটি বই লেখা সম্ভব! বলা হয়ে থাকে, হেমিংওয়ের প্রতিটি উপন্যাস লেখার জন্য একজন প্রেরণাদাত্রীর প্রয়োজন ছিল। হয়ত সেজন্যই
তিনি আটজন নারীর সঙ্গে কাটিয়েছিলেন উত্থান পতনের বর্ণিল জীবন। এছাড়াও ছিল অনেক বান্ধবী। এই বইটি নিয়ে একটি দীর্ঘ আলোচনা লেখা চলছে। বইটি পড়তে এত ভালো লেগেছে যা এখানকার ছোট্ট আলোচনায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে একটি পর্বের সামান্য অংশ আলোকপাত করলাম।
হেমিংওয়ের গৃহদাহ পর্বটা যে কোনো সাধারণ মানুষের কাছেও বেদনার মনে হবে। কেননা, হ্যাডলি ছিলেন হেমিংওয়ের দুঃখের দিনের সাথি। যখন হেমিংওয়ে ছিলেন ছন্নছাড়া, নামডাক ছড়ায়নি আর অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল। হ্যাডলি তখন পারিবারিকভাবে পাওয়া অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছিলেন হেমিংওয়েকে। প্যারিস জীবনে হেমিংওয়ে দম্পতি যখন চরম দারিদ্র্যসীমায়, হ্যাডলি তলা ক্ষয়ে ফুটো হয়ে যাওয়া একজোড়া জুতা নিয়ে চলতেন তখন ওই দুঃসময়ে বিশেষ অভিসন্ধি নিয়ে আবির্ভূত হন পলিন ফেইফার। অর্থনৈতিক সাপোর্ট দিতে ধীরে ধীরে সংসারের তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে ঢুকে পড়েন হ্যামিংওয়ের জীবনে।
আর পলিনকে না ভালোবেসে কোনো উপায় ছিলনা লেখকের। তবে দুঃসময়ের প্রিয় সাথী হ্যাডলিকে ছেড়ে না দিয়ে পলিনকে বিয়ে করারও উপায় ছিলনা হেমিংওয়ের কাছে। কেননা, খ্রিস্টানধর্মে একই সময়ে দু’জন স্ত্রী রাখার নিয়ম নেই। আর যদি তা থাকত তবে হ্যাডলির সঙ্গে সতীনের সংসার করতে হত পলিনকে। কারণ হেমিংওয়ে হ্যাডলিকেও যে সমানভাবে ভালোবাসতেন। ডেট্রয়েট ফ্রি প্রেস পত্রিকায় যখন হ্যাডলির সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের খবর ছাপা হয় তখন হেমিংওয়ের বাবা তাকে চিঠি লেখেন। আর তাতে তিনি কামনা করেন যাতে সে স্ত্রীকে ফিরে পেয়ে সুন্দরভাবে সংসার করতে পারেন। কিন্তু ততদিনে বড্ড দেরি হয়ে গেছে। হ্যাডলির সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে পলিনকে বিয়ে করে নিয়েছেন হেমিংওয়ে। বিচ্ছেদের কিছুদিন পর হ্যাডলি পুত্র বামবিকে নিয়ে আমেরিকায় চলে যান। আর সেখানে তাকে কেউ বিধ্বস্ত অবস্থায় না দেখে বেশ অবাক হয়েই গিয়েছিলেন। ততদিনে হ্যাডলি নিজেকে মানসিকভাবে পোক্ত করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
হেমিংওয়ের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের ছয় বছর পর হ্যাডলি আবার বিয়ে করেন মোরার নামে এক সাংবাদিককে। কেননা ততদিনে হেমিংওয়ে পলিনকে ছেড়ে পুনরায় হ্যাডলির কাছে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। অথচ, হ্যাডলির মনে হয়েছিল, এতদিনে তিনি একজন যোগ্য, ধীরস্থির এবং একজন পরিপক্ক স্বামী পেয়েছেন। তবে বিচ্ছেদের পর বেশ কয়েকবার দেখাসাক্ষাৎ হয় হ্যাডলি ও হেমিংওয়ের। যা নিয়ে জীবনীকারদের থেকে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।
বইটি প্রকাশ করেছে পাঞ্জেরী পাব্লিকেশন্স
রকমারিতে পাওয়া যায়।