কাজী নজরুল ইসলামের জীবনী
হ্যালো বন্ধুরা, আজকে আমরা সম্পূর্ণ বাংলায় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সংক্ষিপ্ত জীবনী জানব. (kazi nazrul islam biography in bengali)
ভূমিকাঃ বিপ্লবী, বিদ্রোহী, প্রেমিক কবি কাজী নজরুল ইসলাম আমার প্রিয় কবি। কাজী নজরুল ইসলাম দেশে-বিদেশে বিদ্রোহী কবি, বুলবুল কবি ও কওমী গানের কবি বলে পরিচিত। নজরুল ইসলামের কবিতা ও গানগুলাে আমার ভাল লাগার একটি কারণ হচ্ছে এই যে, আমার মনের সঙ্গে কবির মনের একটা মিতালি রয়েছে। তাঁর রচনার ভেতর আমার মনের কথা যেন সর্বতােভাবে ফুটে আছে। এর ভেতর মানুষের বিদ্রোহী আত্মা, সৌন্দর্য পিপাসা, প্রেমধর্মী ও গৌরবকামী হৃদয়ের | অভিযান বারবার তৃপ্তি খুঁজে পায়। এজন্যে তিনি আমার প্রিয় কবি।
কেন তিনি আমার প্রিয়ঃ কাজী নজরুল ইসলামের ‘অগ্নিবীণা আমাকে মুগ্ধ ও আকর্ষণ করে। “বল বীর চির উন্নত মম শির” একথা বলেই তার ‘বিদ্রোহী’ নামক প্রসিদ্ধ কবিতা আরম্ভ। এ কথা কয়টি উচ্চারণ করার সাথে সাথে পাঠক = শ্রোতা মাত্র যেন অন্য জগতে নীত হয়। আজও দুনিয়ায় অবিচার ও জুলুমবাজির প্রবাহ চলছে। মানুষের পরাধীনতা গােলামীর জিঞ্জির আজও ছিন্ন হয়নি। সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও ধর্মক্ষেত্রের অবিচার-অনাচার আজ আকাশপর্শি হয়ে উঠেছে। মূর্তিমান অন্যায় ও অকল্যাণ জগদ্দল পাষাণের মতাে মানুষের বুকে চেপে আছে। মজলুম মানুষের লােনা অশুতে আভ | আ শ-বাতাস আবিল হয়ে উঠেছে। তার বিরুদ্ধে মানুষ বিদ্রোহ না করে থাকতে পারে না। যতদিন পৃথিবীর বুক পাপ-তাপ দূর না হবে, ততদিন কোনাে মানুষ সমাজ সচেতন হতে পারে না। তাই কবির সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে আমাকে বলতে ইচ্ছে হয় “আমি সেই দিন হব শান্ত , যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দনরােল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না অত্যাচারের খড়গ কৃপাণ ভীম রণভূমে রণিবে না।” নজরুল ইসলামের বিদ্রোহের প্রথম সুর তাঁর প্রথম দিকের কাব্য রচনার প্রায় সবগুলােতেই অল্প-বিস্তর রয়েছে। তার ‘অগ্নিবীণা’, ‘ভাজার গান’ প্রভৃতি গ্রন্থে পরিচয় পাই। আগুনের মতাে উজ্জ্বল ও প্রােজ্জ্বল এসব বইয়ের কবিতাগুলােতে ভাবের সাথে ভাষার সংগতি ও মিল এবং অনবদ্য ছন্দের উত্থান-পতন রয়েছে।
মানুষের কবিঃ নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় আশা-আকাঙক্ষার কথাকে কাব্য ও গানে রূপ দান করেছেন। তার রচিত দেশাত্মবােধক গান ও কওমী গান আজ ভারত উপমহাদেশের মানুষের মুখে মুখে, সভায় সভায় , আসরে আসরে গীত হয়। তাই তিনি সর্বোস্তরের মানুষের প্রিয় কবি হিসেবে পরিচিত। কবির মর্যাদায় তিনি আসীন হয়ে আছেন। মহাবিদ্রোহী রণক্লান্ত সৈনিক কবি কাজী নজরুল ইসলাম-এর মানব প্রেমের সঙ্গে আমার আত্মার যােগসূত্র অনুভব করি। মানুষকে ভালবাসাইতাে মানব জীবন। তাই কবি কাজী নজরুল ইসলাম আমার কাছে প্রিয়। বিদ্রোহী সত্তা ছাড়াও কবির সৌন্দর্য পিপাসা এবং জাতীয় জাগরণের প্রচেষ্টা কবিকে অনন্তকাল চিরঞ্জীব করে রাখবে। মুসলিম সমাজের কাছে তার আহ্বান “দিকে দিকে পুনঃ জ্বলিয়া উঠিছে দ্বীন ইসলামী লাল মশাল ওরে যে-খবর তুইও ওঠ জেগে, তুইও তাের প্রাণ প্রদ্বীপ জ্বাল। তাঁর এই উদাত্ত আহবান মুসলিম সমাজকে জাগ্রত করেছে। তার ‘মহরম’, ‘শাতিল আরব’ ইত্যাদি কবিতাগুলাে এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তার সর্বহারা, সাম্যবাদী, কুলি ও মজুর কবিতাগুলাে ইসলামের সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের উৎকৃষ্ট নিদর্শন। বিদ্রোহী কবিতায় কবি কেবল রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে নয়, বিদ্রোহ ঘােষণা করেছেন পৃথিবীর সব অবিচার আর জুলুমের বিরুদ্ধে। নির্যাতনের ইতিহাস পেরিয়ে, বহু ত্যাগ, তিতিক্ষার বিনিময়ে আমরা আজ স্বাধীনতা লাভ করেছি। কবি নজরুলের মতাদর্শে আমাদের সামাজিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হয়তাে এখনাে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কবি জীবন দিয়ে মানুষের কল্যাণ সাধনের গান গেয়েছেন। নজরুলের কবিতায় ভয় নেই, ধ্বংস নেই, নিরাশার অন্ধকার নেই। আছে নির্ভয়ে এগিয়ে চলার তাগিদ। আছে ধ্বংসের মধ্যে দিয়ে নতুন সৃষ্টির উন্মাদনা, আছে আশার আলাে। জীবনে চলার পথে এগুলাে আমাদের সঞ্চয়। কবি ঝিমিয়ে পড়া জীবন ভালবাসেন না। কবির ভাষায় — ধ্বংস দেখে ভয় কেন তাের প্রলয় নতুন সৃজন বেদন।” যুগ-যুগান্তর শেষ হয়ে যাবে কিন্তু কালের ইতিহাস থাকবে অমর অক্ষয়। সেই ইতিহাস তার নির্ভয় বাণী অনির্বাণ দীপশিখার মতােই আমাদের পথ দেখাবে। গানের ভুবনে কবি এক অবিস্মরণীয় শিল্পী। তিনি রচনা করেছেন মানব হৃদয়ের দুঃখ- বেদনা, বিরহের কালজয়ী সংগীত। শুধু রচনা করেই ক্ষান্ত হননি, সুর সৃষ্টি করেছেন অনবদ্য বিচিত্র ঢং-এ। পৃথিবীতে তাঁর মতাে আর কোনাে কবির এত বেশি গান রেকর্ড হয়নি। তিনি বাংলার শ্রেষ্ঠ সুর স্রষ্টা। তিনি পৃথিবীর অন্যতম প্রধান সংগীত রচয়িতা হিসেবে পরিগণিত হয়ে আছেন। প্রকৃতি বর্ণনা, নারীর অধিকার এবং শিশুমন নিয়ে তাঁর অনেক কবিতা আছে। “বাতায়ন পাশে গুবাক তরুর সারি।” প্রকৃতির সাথে তাঁর নিবিড় সম্পর্কের পরিচয় বহণ করে। “নারী” কবিতায় তিনি নারীর অধিকার তুলে ধরে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। শিশুদের জন্যে তার ঝুলি পরিপূর্ণ। লিচু চোর’, ‘খুকি ও কাঠ বিড়ালী’, ‘ঝিঙ্গেফুল’, ‘খাদু’, ‘দাদু’, ‘প্রভাতি’ কবিতাগুলােতে শিশু মনের সুন্দরতম বিকাশ ঘটেছে।
তার মতাে প্রিয় করে আর কোনাে কবিকে আমরা এত কাছাকাছি পাইনি। দেশপ্রেম, মানব প্রীতি, শিশুদের প্রতি ভালবাসা, জাগরণী গান, সাম্যবাদ, মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের এবং মানব প্রকৃতিমূলক বিচিত্র সংগীত ইত্যাদি আমাদের দেশ ও ও জাতি গঠনে অমূল্য সম্পদ; বাংলা সাহিত্য ভাণ্ডারে উজ্জ্বল ঐশ্বর্য। তাঁর আদর্শ এদেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এতে কোনাে সন্দেহ নেই। আমি তাকে ভালবাসি। তিনি আমার প্রিয় কবি। তিনি আমাদের জাতীয় কবি।