কুহেলিকা উপন্যাস রিভিউ, PDF ডাউনলোড
কাজী নজরুল ইসলামের লেখা বইগুলো সাহিত্য জগৎতে আলোড়ন সৃষ্টি করে থাকে। রিভিউ দেওয়া কুহেলিকা বইটি মূলত একটি উপন্যাস। কাজী নজরুল ইসলামের লেখা সেরা একটি উপন্যাস। উপন্যাসের শুরু মেস বাড়ির গল্প দিয়ে হলেও শেষ পর্যন্ত ঘটনা প্রবাহ এবং লেখকের প্রতিভার কারণে অন্য সকল উপন্যাসের চেয়ে আলাদা হয়েছে.
Kuhelika book review : কুহেলিকা উপন্যাস রিভিউ
আমার সবচেয়ে প্রিয় উপন্যাস এটি। উপন্যাস টির ভিতরে অন্যরকম একটা ভালো লাগার বিষয় আছে। এক শতক আগের সামাজিক পরিবেশের ঘটনা হলেও এ সময়ের অনেক মানবিক অবস্থার মিল আছে এতে। অন্য চরিত্রের অন্যান্য ভূমিকা থাকলেও এটি মূলত প্রধান চরিত্র জাহাঙ্গীরের জীবন নিয়েই। প্রথমে মনে হবে এক ব্যর্থ মানবের কাহিনী। তার পর মনে হবে প্রেম কাহিনী, প্রেম সবে শুরু। তার পর মনে হবে (মূলত প্রথম থেকেই) নারী বিদ্বেষী এক যুবক। সব শেষে সে এক গুপ্ত সৈনিক।
পড়ার সময় মনে হয় জাহাঙ্গীর চরিত্রটি আমি নিজেই। জাহাঙ্গীরের যে ধৈর্য্য, আমিত্ব, আবেগ, উদারতা, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার যে ক্ষমতা লেখক দেখিয়েছেন তা সত্যিই এ সময়ে অনুকরণীয়। এমন লেখা কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিভি দিয়েই সম্ভব। চাইলে অনেক কিছু শিখতে পারবেন, নিজের মধ্যে গুণ গুলো আনতে পারবেন। এক কথায় এটি অসাধারণ।।
উপন্যাসটি কত বার পড়েছি সঠিক বলতে পারব না। অন্তত ৬/৭ বার তো হবেই। প্রতিবারেই নতুন মনে হয়েছে প্রিয় উপন্যাসটিকে। এটি অসাধারণ ছিল।
উপন্যাসের শুরু টা এক মেস বাড়ি। মেস বাড়ি হলেও মূলত এই সময় যা দাড়িয়েছে, তাহলো বিশ -বাইশজন তরুন এর এক আড্ডাখানা। দুই তিনটি চতুষ্পায়া জুড়ে বসে আলোচনা চলছিল। আলোচনা নারী নিয়ে..তরুন কবি হারুন হঠাৎ ই বলে বসল, “নারী কুহেলিকা।”আলোচনার অংশীদার অতচ তাহার কোন উৎসাহ চোখে পড়ছিল না, যাকে সবাই উলঝলুল বলে সম্মোদন করতেই বেশি পছন্দ করেন।যার অর্থ হলো-এলোমেলো। তিনি ই এক মাত্র সাড়া দিয়ে বললেন, “হু”।বাকি রা কেউ হাসল, কেউ বা টিপ্পনি কাটল। তবে আমজাদ বলল, “কবি তার থেকে না হয় বলো, নারী প্রহেলিকা।” এবার হাসির তোড় কিছু বাড়িল যাতে কবি হারুনকেও ছুয়ে গেল। তবে, উলঝুলুল আগের মতোই নিরাসক্ত, “হু” বলেই চালিয়ে দিলো। আশরাফ, যে নতুন বিয়ে করেছে। বউ কে এতো সাধাসাধি করে, এত চিঠি লিখে মাত্র একটা চিঠির উত্তর পেয়েছে। তাও আবার দু লাইনের। সে বলিল, “নারী অহমিকা।”সকলেই সমস্বরে হেসে উঠল, মনে হলো কোথাও এক ঝাক থালা বাটি পড়িয়া গেল।
এবার উলঝুলুল আগের থেকে একটু জোর দিয়ে বলল, “হুমম”।উলঝুলুল এর কোন দিকেই তেমন খেয়াল ছিল না, হঠাৎ বলে উঠল, ” নারী নায়িকা।”তার ঔদাসীন্যের ভাব দেখে, সবাই হারুন কে চেপে ধরল-হারুন সত্যই কবি। তার খ্যাতি কিছুদিনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে।সে এবার বি.এ.দিবে। তার পড়ায় তেমন ইচ্ছা নাই বলতে, পাঠ্যবইয়ে। অকাজের বই সে বেশ পড়ে।সে তার পিতার বড় পুত্র। পিতা অন্ধ এবং মাতা পাগলীনি। দুইটি বোন এবং একটি ছোট ভাই। ভাইটি ইস্কুলে পড়ে। সেই সংসার দেখে। নিজে টিউশানি করে চলে। কষ্ট হলেও মাস শেষে ভাইকে দশ টাকা পাঠায়।বাড়ি তার বীরভূমে।মেস বাহীনির জোরে হারুন বর্ননা করলো, কেন তার নারী কুহেলিকা। কিছু আলোচনার পর উলঝুলল যার মূল নাম জাহাঙ্গীর, সেও তার নারী কেন নায়িকা তার বর্ননাও দিলো। তাতে সে বলল, “নারীকে সে পুজো করে না, কিন্তু অশ্রদ্ধাও করে না।”এই জাহাঙ্গীর উপন্যাসের মূল নায়ক। তার বাড়ি কুমিল্লা।তবে সে কলিকাতায় মানুষ হয়েছে। তার পিতা ছিলেন কুমিল্লার বিখ্যাত জমিদার এবং মানীলোক। চার বছর হলো মারা গেছেন। এখন তার মা সব জমিদারী দেখাশোনা করেন।তার জমিদারি -পরিচালনের অতিদক্ষতা দেখে লোকে বলাবলি করে, “মেয়েরা সুযোগ পাইলে জমিদারি তো চালইতে পারেই, এমন কি কাছা আঁটিয়া ঘোড়ায় ও চড়িতে পারে।
পিতা বেঁচে থাকতে তারা কলকাতায় ই থাকতেন। এমন কি কলকাতায় তাদের কয়েকটি বাড়িও ছিলো। কিন্তু পিতা মারা যাওয়ায় সব বাড়ি ভাড়া দিয়ে, জাহাঙ্গীর কে হোস্টেলে দিয়ে, তার মা কুমিল্লায় চলে যান। হোস্টেলে কড়া রোল মানতে না পারায় জাহাঙ্গীর মেসে এসে স্থান নেয়। জমিদার এর পুত্র হিসেবে যতো টা জৌলুস নিয়ে চলার কথা ছিলো তার কোনটাই তার মধ্যে নেই। তার এত বেশি রংহীন আর সাদাসিদার একটা ইতিহাস আছে। মা এবং মাতৃভূমি কে যখন স্বজ্ঞানে “স্বর্গদপি গরীয়াসী” ভেবে সম্মান করতে শুরু করে… সেই সময় হঠাৎ জানতে পারলো,তার মা কলকাতার ডাক সাইটে এক বায়জী ছিল, আর তার বাবা চিরকুমার। সে তাহার পিতামাতার কামজ সন্তান।সেদিন থেকেই তার জীবনের রং বদলে গিয়েছে…মানুষের জীবনের অর্থ নতুন করে বুঝিবার সাধনা চলছে…কাহিনীর আবর্তে চোখ পরে বিপ্লবী নেতা প্রমত দা, হারুন, হারুনের পুরো পরিবার-তার মা, বাবা, বোন- তাহমিনা উরফে ভূনী, মোমি, ভাই-মোবারক, দেওয়ানজি, জয়ীতা দেবী, চম্পা চরিত্র গুলো..কুহেলিকা শব্দের অর্থ “কুয়াশা”।উপন্যাসে নারী চরিত্র গুলোর সাদৃশ্য এরূপেই। এমন কি উপন্যাসের শেষ পৃষ্টায়, জাহাঙ্গীর এর শেষ বাক্যে, সেও স্বীকার করে নেয়”নারীকুহেলিকা”উপন্যাসে স্বদেশী বিপ্লব এর একটা ছাপ আছে বড় অংশ জুড়ে। হিন্দু, মুসলিম এর বিদ্বেষ টাও বেশ আলোচনাময়। মুসলিম দের কে ইংরেজ এর ব্যবহার করার যে প্রক্রিয়া গুলো ছিলো সে সময় এর ও একটা চিত্র আছে।
..নজরুলের উপন্যাস..! এক সময় বঙ্কিম, নজরুলে আমার একটু ভীতি কাজ করতো । আমি এড়িয়ে যেতে চাইতাম উনাদের বই গুলো। তবে বঙ্কিমে সংকট কেটেছে বেশ। এবার নজরুল ও কাটবে আশা চলছে। “মৃত্যুক্ষুধা” পড়েই বুঝেছিলাম। বই কতো টা ভালো লাগছে বুঝানোর ভাষা নেই। তবে এটা আমার এক বন্ধুর প্রিয় বইয়ের, দুটোর মধ্যে একটা। বন্ধু সুত্রে আমি তার থেকে উপহার পেয়েছিলাম। উপন্যাস টা শেষ করার পর আমার গলা ব্যাথা করেছে, চোখ ও জ্বলেছে। ঠিক কার জন্য যে কষ্ট পাচ্ছিলাম, আমি বুঝতে পারিনি। কিন্তু সব গুলো চরিত্রকে অসহায় মনে হয়েছে। “সামনে ছিলো আমি ইচ্ছা করলেই ধরতে পারতাম, হঠাৎ ই যেন গন্ডির বাহিরে চলে গেছে। আমি আর কখনো কোনদিন ধরতে পারব না।” এরকম একটা ব্যাপার।আমি সত্যিই কেঁদেছি।কিন্তু কেন জানি না। অনেক দিন আগে যা হয়েছিলো “জোছনা জননীর গল্প” বই টা পড়ে।
মৃত্যুক্ষুধা উপন্যাস ডাউনলোডঃ