বই রিভিউ ও ডাউনলোড

মা আনিসুল হক বই রিভিউ

বই:মা
লেখক : আনিসুল হক
ঘরানা : উপন্যাস
প্রকাশনী : সময়
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ : ধ্রুব এষ
প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি, ২০০৩
বইয়ের প্রচ্ছদে লেখা ‘মা’ শব্দটাতেই চোখ আটকে যাবার কথা যেকোনো পাঠকের । তবে শুধু প্রচ্ছদ নয়, এই বইয়ের প্রতিটা পৃষ্ঠা, প্রতিটা শব্দ আপনাকে টানবে।এই বই উপেক্ষা করলে আসলে নিজেকেই বঞ্চিত করা হবে !
এই উপন্যাস লেখকের প্রখর কল্পনাশক্তির ফসল নয় কিংবা তার কলমের যাদুতে রচিত কোনো কাল্পনিক উপন্যাস নয়।এটি একটি বাস্তবধর্মী উপন্যাস।আদতে আমার কাছে মনে হয়েছে এই উপন্যাসের মুখ্য চরিত্র দুজন মা এবং তাদের শ্রেষ্ঠ সন্তান। সন্তানটির নাম ‘আজাদ’। শ্রেষ্ঠ সন্তান বলবার কারণ হলো দিনশেষে দুজন মা-ই এই সন্তানটির পরিচয়ের মাধ্যমে নিজেকে গৌরবান্বিত হতে চেয়েছেন এবং হয়েছেন। এইবার পরিষ্কার করে বলতেই হয়, দুজন মার একজন আজাদের জন্মদাত্রী মা সাফিয়া বেগম আর অন্যজন আজাদের

দেশমাতা, প্রিয় জন্মভূমি ‘বাংলাদেশ’।

তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের একজন শিল্পপতি ছিলেন ইউনুস চৌধুরী।ইউনুস চৌধুরী এবং সাফিয়া বেগম দম্পতির একমাত্র সন্তান আজাদ। স্বাভাবিকভাবেই পিতার বিত্ত-প্রভাব-প্রতিপত্তি আর মায়ের অশেষ আদর-যত্নের মধ্যে দিয়েই বেড়ে ওঠতে থাকে আজাদ।আজাদ যখন কৈশোরে পদার্পণ করেন তখনই জানতে পারেন তাঁর পিতা দ্বিতীয় বিবাহ করেছেন এবং ঠিক সেই মুহূর্তেই আলিশান বাড়ি-গাড়ি, সমস্ত বিত্ত-বৈভবকে তুচ্ছ করে আজাদের আপোষহীন মা সাফিয়া বেগম আদরের ধন আজাদ কে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে আসেন।সেই থেকে শুরু হয় একজন সাধারণ নারীর অসাধারণ হয়ে ওঠার গল্প।শুরু হয় তাঁর জীবন সংগ্রাম।মায়ের বহু কষ্ট-ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে আজাদের শিক্ষাজীবন শেষ হয়।আজাদের চোখে তখন একটাই স্বপ্ন ছিলো –
“ভালো চাকরি করে মায়ের দুঃখ ঘোচাবে”।কিন্তু সেইসময়-ই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।সাফিয়া বেগমের দুঃখ ঘোচাবার আগেই আজাদ তার-ই আরেক মা তথা বাংলা মায়ের দুঃখ ঘোচাতে যোগ দেয় মুক্তিযুদ্ধে।মা সাফিয়া বেগমও নিজের আদরের ধন কে মুক্তিযুদ্ধে যেতে বিন্দুমাত্র বাধা দেননি ।গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা আজাদ বেশ কিছু অপারেশনে অংশ নিয়ে সফলও হয়েছিলেন।১৯৭১ সালের ৩০ শে আগস্ট নিজ বাড়ি থেকেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আজাদ কে ধরে নিয়ে যায়।তারপর আজাদ আর কখনো বাড়ি ফেরেনি, মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে পারেনি।যেখানে নিয়ে যাওয়া হলো সেখানে নির্মম অত্যাচার করা হয় বাংলা মায়ের সূর্যসন্তানদের।আজাদের পরিণতিও তাদের মতোই হয়েছিলো। তবে, আজাদের সাথে তার মায়ের দেখা হয়েছিলো। সেদিন মা আজাদকে বলেছিলেন কোনোপ্রকারে তিনি যেন তার সহযোদ্ধাদের পরিচয় প্রকাশ না করেন।
Book Name Maa
Author Anisul Haque
Publisher bangla pdf
Editions 2018
Total pages 506
Categories PDF Download
PDF Quality High
Size 4 MB
Downloading status FREE epub  pdf Full Book
আজাদ মায়ের কথা অমান্য করেনি, হয়তো সেজন্যই তাঁর প্রাণ কেড়ে নেয় হানাদাররা। পশুসম হানাদাররা আজাদের শেষ ইচ্ছাটুকু পূরণ হতে দেয়নি।আজাদ বহুদিন ভাত খাননি বলে মায়ের কাছে ভাত খেতে চেয়েছিলেন।পরদিন মা ভাত নিয়ে কারাগারে গেলেও আজাদের দেখা পায়নি।সেইদিন থেকে ৩০শে আগস্ট ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত কোনোদিন মুখে ভাত তোলেন নি মা সাফিয়া বেগম। এমনকি ছেলে জীবনের শেষ সময়ে ভালো করে ঘুমাতে পারেনি বলে মা তাঁর জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মাথার নিচে একটি কাঠের টুকরো দিয়ে মাটিতে বিছানা পেতে ঘুমিয়েছেন।তাঁর ছেলে তাঁর কোলে ফিরে আসবে এই আশায় ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত বাড়ি বদলাননি,বস্তির ছোট্ট কুঠরীতে দিনের পর দিন কাটিয়ে দিয়েছেন ছেলের ফেরার আশায়। কিন্তু হায়,ছেলে আর কখনো ফেরেনি!দেশমাতার দুঃখ আজাদ ঠিকই ঘোচাতে পেরেছিলেন,দেশমাতাকে স্বাধীনতার সূর্য এনে দিয়েছিলেন কিন্তু জন্মদাত্রী জননী সাফিয়া বেগমের দুঃখ ঘোচাবার সুযোগ তাকে হানাদার বাহিনী দেয়নি।অসীম দুঃখ-যন্ত্রণা বুকে চেপে রেখে জীবনে একের পর এক সংগ্রাম করে গেছেন প্রচণ্ড ব্যক্তিত্ববোধসম্পন্ন নারী সাফিয়া বেগম।বুকে পাথর চেপে রাখা এই নারী কখনো নিজের ইচ্ছা কারো সামনে প্রকাশ করেননি তবে জীবনের শেষপ্রান্তে এসে বলেছিলেন -“আমার কবরে শুধু লিখে দিও শহীদ আজাদের মা”। কে বলে মানুষ নশ্বর?
এই রত্নগর্ভা নারী আজও কোটি কোটি বাঙালির হৃদয়ে তিনি বেঁচে আছেন একজন মা হিসেবে; ‘শহীদ আজাদের মা’।
পরিশেষে, মুক্তিযুদ্ধের পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী বছরগুলোয় বাংলাদেশ, একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর মায়ের অতুলনীয় ত্যাগ ও বিরোচিত উপাখ্যান নিয়ে রচিত এইহৃদয়স্পর্শী বাস্তবধর্মী উপন্যাস যার প্রতিটি অংশে ফুটে ওঠেছে একজন মায়ের অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, অসামান্য ত্যাগ,অশেষ জীবন সংগ্রাম এবং অসীম ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি।যে উপন্যাস আপনাকে বারবার কাঁদাবে, আপনার মনে দেশাত্ববোধ জাগ্রত করবে , আপনার মধ্যেকার শুভশক্তির উত্থান ঘটাবে এবং বারবার বাংলার বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধে নত হতে বাধ্য করবে । এই উপন্যাস আপনাকে বোঝাবে, কত ত্যাগ-তিতিক্ষা-অশ্রুজল আর অকৃত্রিম ভালোবাসার ফসল আমাদের এই বাংলাদেশ। নিঃসন্দেহে, এই উপন্যাস ঐশ্বর্যমণ্ডিত ‘মা’ শব্দটির মাহাত্ম্য আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।
দেরি না করে আজই পড়ে ফেলুন অসাধারণ এই উপন্যাসটি।বই পড়ুন,আলোকিত হন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button