বই রিভিউ ও ডাউনলোড
মালঞ্চ উপন্যাস Pdf Download
Malancha pdf Rabindranath Tagore book
বইয়ের নামঃ– মালঞ্চ
লেখকঃ– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বইয়ের ধরনঃ– উপন্যাস
প্রকাশকঃ– রনি আহমেদ জয়
প্রকাশনীঃ– সত্যকথা প্রকাশ
প্রকাশকালঃ– ২০১০ সাল
প্রথম প্রকাশঃ– ১৯৩৪ সাল
প্রচ্ছদঃ– কামরুল ইসলাম গোলাপ
মুদ্রণঃ– অক্ষর প্রিন্টার্স
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ– ৪২
মূল্যঃ– ৬৮/=
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বাংলা সাহিত্যের একজন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাঁকে বাংলা ভাষার ও বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তাঁকে বিশ্বকবি, গুরুদেব নামেও আখ্যায়িত করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬১ সালের ৭ই মে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। রবীন্দ্রনাথের কাব্যের মধ্যে ভাবগভীরতা, গীতিধর্মিতা, চিত্ররূপময়তা, অধ্যাত্মচেতনা, ঐতিহ্যপ্রীতি, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম, স্বদেশপ্রেম, বিশ্বপ্রেম, রোম্যান্টিক, সৌন্দর্যচেতনা, ভাব, ভাষা, ছন্দ ও আঙ্গিকের বৈচিত্র্য, বাস্তবচেতনা ও প্রগতিচেতনা বিদ্যমান। বাংলা সাহিত্যের প্রায় সমস্ত শাখায়ই রয়েছে তাঁর অবাধ বিচরণ। সাহিত্যে অসামান্য কৃতিত্ব দেখানের জন্য নোবেল কমিটি তাঁকে ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার প্রদান করে। তিনি চলে গেছেন ঠিকই কিন্তু বাংলা সাহিত্যেকে করে গেছেন ঐশ্বর্যমন্ডিত। অভূতপূর্ব প্রতিভাবান এই কবি ১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট জোড়াসাঁকোর বাসভবনেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। “দুই বোন” উপন্যাসের মতো “মালঞ্চ” ও তেমন একটা বড় নয়। দুটো উপন্যাসের ধরণ একই। তবে “দুই বোন” এর শেষটা হয়েছে মিলনাত্মক আর এটা বিয়োগাত্মক। যাই হোক, সংক্ষেপে বলছি ঘটনাটা…….
#চরিত্র_পরিচিতিঃ–
নীরজা — আদিত্যর স্ত্রী
আদিত্য — উপন্যাসের প্রোটাগনিস্ট
রমেন — আদিত্য’র খুড়তুতো ভাই
সরলা — আদিত্য’র প্রেমিকা(উপপত্নী)
#সংক্ষিপ্ত_বিবরণঃ–
নীরজা আর আদিত্য, অত্যন্ত সুখী দম্পতি। তাঁদের একটা ফুলের বাগান আছে। দু’জনে সেখানেই গড়ে তুলেছে তাঁদের স্বপ্নলোক। হাজারো প্রজাতির ফুলের চাষ করে আদিত্য নিজের আর্থিক অবস্থাও ফিরিয়ে এনেছে বেশ। কিন্তু বেশ কিছুদিন যাবত নীরজা শয্যাশায়ী। বিয়ের অনেকদিন পর্যন্ত নীরজা সন্তানসম্ভবা হতে পারে নি। ক’বছর পরে নীরজা সন্তানসম্ভবা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বাচ্চাটা জন্মের সময়ই মারা যায়। সেই শোকে নীরজা অসুস্থ হয়ে বিছানাতে পড়ে আছে। আদিত্য অবশ্য প্রথম ক’দিন নীরজার সেবাযত্ন করেছে বাগানের কাজ রেখে। কিন্তু আর ক’দিন। এভাবে চলতে থাকলে তো ফুলের ব্যবসা লাটে উঠবে। তাই সে সরলাকে(দূরসম্পর্কের কেউ) নিয়ে আবার বাগানে’র পরিচর্যা করা শুরু করে। সরলা’র সাথে আদিত্যে’র সেই ছোটসময় থেকেই পরিচয়। সরলা’র কাকার কাছে আদিত্য ফুলের চাষ শিখেছে তাই সেই ছোটোবেলা থেকেই দু’জনে একসাথে চলেছে-ফিরেছে। সরলা অবিবাহিত, দেখতে শুনতেও বেশ। আস্তে আস্তে একসাথে কাজ করতে করতে দু’জন দু’জনার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। সবসময় একসাথে ঘোরাফেরা করতে থাকে। নীরজা কিছুটা আঁচ করতে পারে ব্যাপারটা। ইদানীং আদিত্য যে তাঁকে অবহেলা করছে এটাও বুঝতে পারে সে। আগে নীরজা’র কোনোকিছু লাগলে আদিত্য স্বয়ং আসতো এখন রমেনকে(আদিত্য’র খুড়তুতো ভাই) পাঠায়। এতসব কিছু নীরজা দেখে আর মুখ বুজে বিছানায় পড়ে থাকে। কিন্তু আর কতদিন!! নীরজা’র মনের ক্ষোভ, অভিমান, দীর্ঘশ্বাস প্রকাশ পায় নিম্নোক্ত লাইনটিতেঃ–
“তোদের জামাইবাবু একদিন আমাকে ডাকতো ‘রঙমহলের রঙ্গিনী’। দশ বছর আমাদের বিয়ে হয়েছে, সেই রঙ তো এখনও ফিকে হয়নি কিন্তু সেই রংমহল?”
একদিন আর সহ্য করতে না পেরে নীরজা আদিত্যকে সরলা’র সাথে অনৈতিক সম্পর্কের জন্য দোষারোপ করে। এতে আদিত্য রাগ হয়ে বাড়ি থেকে চলে যায়। কিন্তু নীরজা আদিত্যকে ছেড়ে থাকতে পারে না৷ তাই সে ভাবে আদিত্যকে সরলা’র হাতে সপে দিয়ে নিজেই চলে যাবে কোথাও। কিন্তু পরেই আবার আদিত্য চিঠি লিখে পাঠায় নীরজাকে। যেখানে সে বলে যে, এই সরলা’র কাকাই তাঁকে(আদিত্যকে) বাগান করার কাজ শিখিয়েছিলো, তাঁর(সরলা’র কাকার) সর্বস্ব দিয়ে আদিত্যকে সাহায্য করেছিলো বাগান করার জন্য এমনকি সে নিজে জিম্মাদার থেকে আদিত্যকে টাকা ধার এনে দিয়েছিল তাই সরলা’র প্রতি তাঁর(আদিত্যর) একটা কর্তব্যবোধ আছে। চিঠি পেয়ে নীরজা তাঁর নিজের ভুল বুঝতে পারে। তখন সে অসুস্থ অবস্থায়ই ঠাকুরঘরে যায় ক্ষমা চাইতে আর সরলাকে সেখানে ডেকে পাঠায়। নিজের দামী গহনা পরিয়ে দেয় সরলাকে যাতে সরলাকে নিয়ে সে যা ভেবেছে তা মন থেকে মুছতে পারে। সরলা আর রমেনের বিয়ে দিবে একথাও ভাবে। কিন্তু বাহ্যিকভাবে যতই নীরজা নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করে ততই সে ব্যর্থ হয়। সরলা বুঝতে পারে যে নীরজা ভিতরে ভিতরে দংশিত হচ্ছে। তাই সে চুরির অপবাদ নিয়ে জেলে চলে যায় আদিত্য ও নীরজার সামনে থেকে। আবার আদিত্য ও নীরজা এক হয়। কিন্তু সাজার মেয়াদ শেষ হলে গেলে সরলা আবার ফিরে আসে। নীরজা আবার আদিত্যকে হারাবার ভয়ে কেঁপে ওঠে। আর সহ্য করতে না পেরে নীরজা শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করে৷ এখানেই উপন্যাসটার পরিসমাপ্তি ঘটে।
#গুরুত্বপূর্ণ_লাইনঃ–
★ ফুল দেওয়ার প্রধান মূল্য নিজের হাতে দেওয়া।গঙ্গার জল হলেও যদি তা নলের ভেতর দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে তার সার্থকতা থাকেনা।
★ উড়ো বাতাসে আগাছার বীজ আসে ভেসে, প্রশ্রয় পেলে শেকড় ছড়ায়, তার পরে আর ওপড়ায় কার সাধ্যি।
★ তোদের জামাইবাবু একদিন আমাকে ডাকতো ‘রঙমহলের রঙ্গিনী’। দশ বছর আমাদের বিয়ে হয়েছে, সেই রঙ তো এখনও ফিকে হয়নি কিন্তু সেই রংমহল?
“তোমরা পুরুষ মানুষ দুঃখের সঙ্গে লড়াই কর, আর মেয়েরা যুগে যুগে দুঃখ কেবল সহ্যই করে। চোখের জল আর ধৈর্য, এ ছাড়া তো আর কিছুই সম্বল নেই তাদের।”
“দুই বোন” আর “মালঞ্চ” দুটো উপন্যাসই একই ধারার। পুরুষজাতি যে স্বভাবতই এমন তাই দেখিয়েছেন লেখক উপন্যাসদুটিতে। তাছাড়া ক্ষণিকের জন্য দূরে যাওয়া মানে বাকিদের হৃদয় থেকে হারিয়ে যাওটা এই বিষয়টাও উঠে এসেছে উপন্যাসটিতে। যেরকমটা আমরা পাই Anita Desai এর short story “Games at Twilight” এ Roghu এর চরিত্রে আবার William Carlos Williams এর “Landscape with the Fall of Icarus” কবিতাতে……
“The edge of the sea concerned with itself,
Sweating in the sun that melted the wings’ wax,
Unsignificantly off the coast there was,
A splash quite unnoticed this was Icarus drowning.”
ছোট হিসেবে উপন্যাসটা মোটামুটি ভালোই। পরকিয়া নামক ঘণ্য বিষয়টা আর তার ফলাফল বেশ ভালোভাবেই ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। বিবাহের মত একটা পবিত্র সম্পর্ককে নিঃশেষ করে দেবার জন্য পরকীয়া’র মত একটা ঘৃণা সম্পর্কই পর্যাপ্ত। ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।