Robin Jaman Khan pdf

সব বরবাদ হয়ে যেত লালী | সব বরবাদ হয়ে যেত।    এবারও কোনও উত্তর দিল না লালী | নিঃশব্দে রুপোর পাত্রে সুরা ঢেলে দিলে,  বাঁদীর মতোই বিনীত ভঙ্গিতে, বিনত লজ্জায় ।    পাত্রটা তুলে নিয়ে একটা চুমুক দিয়েই নামিয়ে রাখল হীরাবাঈ ।    ধীরে ধীরে বলল, লালী, কত খুঁজেছি তোমাকে, সারা দুনিয়া ঘুরেছি তোমার  খোঁজে, শেষে হয়রান হয়ে গিয়েছিলাম । তারপর হঠাৎ বিবিবাজারে দেখা পেলাম  তোমার ।    বিশ্মিত একজোড়া চোখ চেয়ে লালী প্রশ্ন করলে, আমাকে ? আমাকে চিনতেন  আপনি বাঈসাহেবা ?    খিলখিল করে হেসে উঠল হীরাবাঈ ।

বললে, হ্যা, তোমাকে দেখেই চিনেছি আমি । তুমিই পারবে । পারবে না আমাকে  বাঁচিয়ে রাখতে ? আমার নাচ আর গানকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে না তুমি ?    এ কি উন্মাদের কথা হীরাবাঈয়ের মুখে ? অনভিজ্ঞ লালী ভাবলে, সুরার নেশীতেই  বুঝি অর্থহীন প্রলাপ বকে চলেছে হীরাবাঈ । তাই ভয়ে ভয়ে লালী অস্ফুটে বললে,  পারব।    – পারবে, নিশ্চয় পারবে । গভীর আবেগে লালীর হাতটা মুঠোর মধ্যে জড়িয়ে  ধরল হীরাবাঈ।    তারপর সুন্দর একটি লীলায়িত মুদ্রায়_তালি দিল হাতে । সে আওয়াজ শুনে ছুটে  এল মণিবানু | মাথা নুইয়ে বললে, ফরমাইয়ে বাঈসাহেবা ।    ঢুলুঢুলু স্বপ্নরঙিন চোখে হীরাবাঈ বললে, শরবত। তারপর একটু থেমে বললে,  আর তানপুরা।    কুর্নিশ করলে মণিবানু । হুকুম তামিল করতে চলে গেল । আর যাবার সময়  একবার ফিরে তাকাল লালীর দিকে ।

সে দৃষ্টিতে ঈষার জ্বালা দেখতে পেল লালী |    হীরাবাঈ তাকে একশো মোহর দিয়ে কিনে নিয়েছিল বিবিবাজার থেকে । হাজারো  বান্দা আর বাঁদী লালীর সৌভাগ্যে বিশ্মিত হয়েছিল সেদিন ।    আর মণিবানু চুপ্চুপি বলেছিল, বাঁদীবাজারে তোর মতো নসিব নিয়ে কেউ কখনও  আসেনি লালী । আর আমাকে হয়তো সারাজীবন কাফ্রি খোজার মার খেয়ে মরতে  হবে।    বলে দীর্ঘশ্বীস ফেলেছিল মণিবানু.।    সে দীর্ঘশ্বাসের ব্যথা ভুলতে পারল না লালী। সহানুভূতিতে চোখে জল এল  বাঁদীতল্লাট ছেড়ে আসার সময় । দুঃখ হল মণিবানুর দুঃসহ নসিবের কথা ভেবে ।

একশো মোহর ছুঁড়ে দিয়ে হীরাবাঈ লালীকে নিয়ে এল তার তাঁবুতে । স্নেহের  বন্ধনে তাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করল, কি. পেলে তুমি সুখী হবে লালী, কি করলে  তোমার মুখে হাসি ফুটবে £    এ আকন্মিক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারল না লালী । প্রশ্ন না রসিকতা বুঝতে পারল  না। পুনরায় প্রশ্ন করলে হীরাবাঈ, বললে, কি চাও লালী, বলো। কি পেলে হাসি  ফুটবে তোমার হাসিনা মুখে ?