বই রিভিউ ও ডাউনলোড
থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ রিভিউ
Book | থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ |
Author | অনীশ দাস অপু , নেপোলিয়ন হিল |
Translator | অনীশ দাস অপু |
Publisher | মুক্তদেশ প্রকাশন |
type | book review |
Edition | 1st Published, 2016 |
Number of Pages | 175 |
চিন্তা করুন এবং ধনী হোন pdf download
যৌন আকাঙ্ক্ষার রহস্য: রূপান্তরিত শক্তি মানুষকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়
পৃথিবীতে ব্যবসা, বাণিজ্য, রাজনীতি, খেলাধুলা, ফিল্ম ইণ্ডাষ্ট্রি, সাহিত্য ও লেখালেখি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন সহ মানবসভ্যতায় যতগুলো দিকে সফল মানুষের উপস্থিতি দেখা যায়- সবার পিছনে যতগুলো প্রভাবক শক্তি কাজ করে তার মধ্যে অন্যতম প্রধান একটা শক্তির নাম sex transmutation তথা যৌন আকাঙ্ক্ষার রূপান্তরকরণ। বিষয়টা এতোটাই গভীর বিশ্লেষণের দাবি রাখে যে- আমার এই ছোট্ট নিবন্ধের পুরোটা না পড়লে অনেকের পক্ষে ই সেটা উপলব্ধি করা সম্ভব হবে না।
চলুন আলোচনা করা যাক।
থিংক অ্যান্ড গ্রো রিচ রিভিউ
আজ থেকে প্রায় এক যুগ আগে আমি একটি বিশ্বখ্যাত বই কিনে পড়া শুরু করি। বর্তমানে বইটির যে কয়টি বাংলা অনুবাদ যাচাই করার সুযোগ হয়েছে আমার তার কোনোটিতেই যথাযথ ভাব ও মূল বইয়ের শক্তিমত্তার উপস্থিতি পাইনি আমি। তাই গত এক যুগে যতবার পড়েছি, মূল ইংরেজি বইটিই পড়েছি। তবে আশা করছি অচিরেই আমাদের নিজস্ব প্রকাশনী থেকে বাংলায় বইটির অসাধারণ একটি ভাবানুবাদ প্রকাশিত হবে ইনশাআল্লাহ।
নেপোলিয়ন হিল (১৮৮৩-১৯৭০) রচিত “থিঙ্ক এন্ড গ্রো রিচ” শিরোনামের সেই বইটি ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ১৫ কোটি কপি বিক্রি হয়েছে বিশ্বব্যাপী। এবং বইটিকে সর্বকালের সেরা ১০ টি বইয়ের মধ্যে অন্যতম হিশেবে ধরা হয়। সবচেয়ে আকর্ষনীয় বিষয় হলো- বইটি সুদীর্ঘ ২৫ বছরে ২৫,০০০ মানুষের ওপর গবেষণা শেষে লিখিত হয়। এবং সবচেয়ে বড় কথা, বইটি কোটি কোটি মানুষের অন্তর্দৃষ্টি খুলে দিয়ে, সমৃদ্ধ জীবন অর্জনে ভূমিকা রেখে চলেছে।
কথাগুলো এ কারণেই উল্লেখ করছি যে- আমার পোস্টকৃত বিষয়টি মূলত উক্ত বই-র একাদশ অধ্যায়ের অসাধারণ তথ্যসমৃদ্ধ আলোচনার ই সংক্ষিপ্ত রূপ।
বইটির এগারোতম অধ্যায়ের শিরোনাম হলো- THE MYSTERY OF SEX: TRANSMUTATION.
একজন মানুষ তার জীবনে যত বিষয় বা বস্তুর প্রতি আকাঙ্ক্ষা (Desire) অনুভব করে তার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ও সবচেয়ে তীব্র আকাঙ্ক্ষার নাম যৌন আকাঙ্ক্ষা। যখন কেউ এই আকাঙ্ক্ষা দ্বারা পরিচালিত হয় তখন তার মধ্যে প্রখর কল্পনা, সাহস, ইচ্ছাশক্তি, অধ্যবসায় এবং অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি সৃজনশীলতা কাজ করে। যৌন আকাঙ্ক্ষা এতোটাই শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে যে একজন মানুষ এই আকাঙ্ক্ষার দাস হিশেবে, এটাকে চরিতার্থ করার আশায় প্রচন্ড সাহসী হয়ে তার জীবনটাকেই রিস্কের মধ্যে ঠেলে দিতে পারে। আবার আকাশচুম্বী উচ্চতায় থাকা তার সম্মান বিকিয়ে দিতেও দ্বিধা করে না।
একবার ভেবে দেখুন, কোনো বিশেষ চর্চার দ্বারা যদি এই তীব্র শক্তির অভিমুখ ঘুরিয়ে দেয়া যায় তাহলে কি ঘটতে পারে?
নেপোলিয়ন হিল ঠিক সেটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন তার গবেষণালব্ধ ঐ বইটিতে।
নেপোলিয়নের মতে,…The desire for sexual expression is inborn and natural. The desire cannot, and should not be submerged or eliminated. But it should be given an outlet through forms of expression which enrich the body,
mind and spirit of man. If not given this form of outlet, through transmutation, it will seek outlets through purely physical channels (যৌনতা চরিতার্থ করার আকাঙ্ক্ষা জন্মগত এবং স্বাভাবিক। এই আকাঙ্ক্ষাকে নিমজ্জিত বা পরিহার করা যায় না, উচিতও নয়। তবে এটা প্রকাশের জন্য একটি নির্গমন পথ দেয়া জরুরি, যাতে এটা একজন ব্যক্তির দেহ, মন এবং আত্মাকে সমৃদ্ধ করে। রূপান্তরের মাধ্যমে যদি একটি নির্গমন পথ না দেয়া হয়, তবে এটা শুধুমাত্র শারীরিক চ্যানেলের (দৈহিক মিলনের) মাধ্যমেই নির্গমন পথ খুঁজে নেবে).
প্রশ্ন হলো- কি টাইপের নির্গমন পথ দেয়ার কথা বলেছেন নেপোলিয়ন?
যেহেতু নাম শুনেই বুঝতে পারছেন, এটা আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ জীবন অর্জনে পথ দেখানোর জন্য গবেষণালব্ধ একটি বই, সুতরাং বইটির এই অধ্যায়ে যৌন আকাঙ্ক্ষা কে transmutation তথা রূপান্তরকরণের মাধ্যমে কীভাবে আর্থিক সমৃদ্ধি অর্জন করা যায় সে বিষয়েই বলা হয়েছে।
নেপোলিয়ন লিখেছেন,…A river may be dammed, and its water controlled for a time, but eventually, it will force an outlet. The same is true of the emotion of sex. It may be submerged and controlled for a time, but its very nature causes it to be ever seeking means of expression. If it is not transmuted into some creative effort, it will find a less worthy outlet (একটি নদীতে বাঁধ দিয়ে হয়তো সাময়িকভাবে পানিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কিন্তু অবশেষে এটা (পানির তীব্র চাপ) বল প্রয়োগ করে নির্গমন পথ তৈরি করে নেবে। যৌন আবেগের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। যৌন আকাঙ্ক্ষা কে হয়তো সাময়িক সময়ের জন্য নিমজ্জিত বা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কিন্তু প্রকৃতিগতভাবেই এটা বহিঃপ্রকাশের নিজস্ব পথ খুঁজে নেবে। যদি যৌন আবেগকে কোনো সৃজনশীল প্রক্রিয়ায় রূপান্তরিত করা না যায়, তাহলে এটা নিম্ন মানের কোনো উপায়ে নির্গমন পথ খুঁজে নেবে).
যৌন আবেগ সৃষ্টিশীল সক্ষমতার গোপন সূত্র বহন করে। মানুষ অথবা অন্য যে কোনো যৌন আকাঙ্ক্ষা সমৃদ্ধ প্রাণীদের যৌন গ্রন্থি তথা যৌন ক্ষমতাকে নিষ্ক্রিয় করা মানে তাদের কাজের প্রধান প্রভাবক শক্তি কে ধ্বংস করে দেয়া। সুতরাং, ধ্বংস বা নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে নয় বরং এই শক্তিকে রূপান্তরিত করার মধ্য দিয়ে প্রতিটি মানুষকে অসাধারণ কর্মক্ষম এবং সমৃদ্ধ জীবন অর্জনের পথে এগিয়ে দেয়া যায়।
প্রশ্ন হলো- কীভাবে?
চলুন আরেকটু এগোই।
নেপোলিয়ন হিল আজ থেকে ৮৪ বছর আগেই তার গবেষণালব্ধ ফাইন্ডিংস প্রকাশ করে দেখিয়েছেন যে- ১০ টি প্রভাবক শক্তির ডাকে মানুষের মন সবচেয়ে বেশি সাড়া দেয়। সেই ১০ টির মধ্যে প্রথমটিই হলো “যৌনতা প্রকাশের আকাঙ্ক্ষা”। এই আকাঙ্ক্ষা সর্বাধিক কার্যকরভাবে মনের তরঙ্গগুলোকে প্রস্তুত করে এবং শারীরিক কর্মের চাকাগুলোকে সচল রাখে। সুতরাং কোনো মানুষ যদি তার অবদমিত যৌন আবেগকে সৃজনশীল কল্পনা ও কল্পিত বিষয়কে প্রাপ্ত করার তীব্র আকাঙ্ক্ষায় transmute বা রূপান্তর করতে পারে তাহলেই সে সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে। আর এজন্য তাকে অবশ্যই ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তথা SIXTH SENSE কে কাজে লাগানোর দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের বাস্তবতা একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় হলো ‘সৃজনশীল কল্পনাশক্তি’- যা বেশিরভাগ মানুষ ই সারা জীবনেও কখনো ব্যবহার করে না। আর যদি ব্যবহার করেও থাকে, তাহলে সেটা ঘটে নিছক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে। যাহোক, যারা স্ব-প্রণোদিত হয়ে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের সক্ষমতা কাজে লাগায় তারাই প্রকৃত অর্থে প্রতিভাবান।
সৃজনশীল কল্পনাবিভাগ হলো মানুষের ‘সসীম মন এবং অসীম বুদ্ধিমত্তা’র মধ্যে সরাসরি সংযোগস্থল (The faculty of creative imagination is the direct link between the finite mind of man and infinite intelligence)। নেপোলিয়ন আরো লিখেছেন,…all so-called revelations, referred to in the realm of religion, and all discoveries of basic or new principles in the field of invention, take place through the faculty of creative imagination (ধর্মের ক্ষেত্র হিসাবে উল্লেখ করা সমস্ত তথাকথিত উদ্ঘাটন এবং আবিষ্কারের ক্ষেত্রে মৌলিক বা নতুন নীতিগুলির সমস্ত আবিষ্কার সৃজনশীল কল্পনা বিভাগের মাধ্যমে ঘটে).
আপনি বলবেন, ভাই এগুলো তো জানি। মূল কথা বলুন। যৌন আকাঙ্ক্ষা কে কিভাবে সমৃদ্ধি অর্জনে কাজে লাগাতে পারি?
গুড কোয়েশ্চেন।
জটিল আলোচনায় না গিয়ে সরলভাবে বলি। আপনি Kung Fu Panda মুভি সিরিয়ালের প্রথম পর্ব (২০০৮ এ মুক্তিপ্রাপ্ত এনিমেটেড মুভি) দেখলে জেনে থাকবেন, মাস্টার শিফু পো (পান্ডা) কে মার্শাল আর্ট শেখানোর জন্য কি কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। তিনি যখন দেখলেন যে, পান্ডার সমস্ত আগ্রহ খাদ্য কে কেন্দ্র করে, তখন তিনি অভিনব স্টাইলে পান্ডার সামনে খাদ্য রেখে রেখে তাকে মার্শাল আর্টের কৌশলগুলো রপ্ত করালেন।
ঠিক একইভাবে আপনাকে আপনার যৌন আকাঙ্ক্ষা কে সামনে রেখে (হুটহাট অন্যায্য পথে চরিতার্থ না করে) নিজেকে এমনভাবে কাজে লাগাতে হবে যে- যৌন আকাঙ্ক্ষার সেই তীব্র আবেগ ই হবে আপনার ড্রিভেন ফোর্স তথা চালিকাশক্তি। এক্ষেত্রে মজার একটা বিষয় মাথায় আসছে। ধর্মীয় বিধান মেনে চলার ক্ষেত্রে জাগতিক অনাচার ও চাকচিক্য থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে সৎ ও সুন্দর জীবনযাপন করতে পারলে পুরস্কার হিশেবে পারলৌকিক জীবনে আল্লাহ যে জান্নাত দান করবেন সেখানে কিন্তু অসাধারণ দৈহিক সৌন্দর্য্যের অধিকারী নারী পাওয়া যাবে। এই বিষয়টা আল্লাহ নিশ্চয়ই অযথা বলেননি। এর পিছনে কারণ আছে। ঠিক একইভাবে যৌন আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করাকে আপনি পুরস্কার হিশেবে নিয়ে এমনভাবে নিজের মনোযোগ, কল্পনাশক্তি ও সৃজনশীলতা কে কাজে লাগাবেন যে- আপনার উদ্দেশ্য পূরণ হওয়ার পর আপনি আপনার কাঙ্ক্ষিত যৌনতা অর্জন করবেন।
বুঝে থাকলে এটুকুই যথেষ্ট। তারপরও বলে রাখছি, সত্যিটা আমরা স্বীকার করি আর এড়িয়ে যাই- যাই করি না কেন, সত্যের কোনো হেরফের হয় না। সত্য হচ্ছে, যতগুলো কারণে মানব সভ্যতা এগিয়ে চলেছে তার মধ্যে অন্যতম একটি প্রধান চালিকাশক্তির নাম যৌন আবেগ। এই আবেগকে উপযুক্তভাবে কাজে লাগাতে পারলে আপনিও সমৃদ্ধির চূড়ায় পৌঁছে যেতে পারবেন।
সবশেষে বলবো, পুরো বিষয়টা অনুধাবন করতে হলে আরো অনেক বড় করে লিখতে হবে- যা আমার জন্য এই মুহূর্তে কষ্টকর। কেননা, অফিসে বসে অথবা কাজের ফাঁকে ফাঁকে সময় ও সুযোগ মতো আমাকে লিখতে হয়। তারচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি পুরো বইটাই পড়ে ফেলেন। তবে, অনুবাদের ক্ষেত্রে বলে রাখছি, আমাদের অনেক ফাঁকিবাজ অনুবাদক বইটাকে যেভাবে কাটছাঁট করে- ফালতু অনুবাদ করেছে তাতে বহু মূল্যবান মেসেজ হারিয়ে গেছে। তাই অনুবাদ না পড়ে মূল ইংরেজি বইটা পড়ুন। আর তা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে একটু অপেক্ষা করুন প্লিজ। আমার সম্পাদনায় ভাবানুবাদ আসছে ইনশাআল্লাহ…