বই রিভিউ ও ডাউনলোড

একজন আলী কেনানের উত্থান পতন রিভিউ

book– একজন আলি কেনানের উত্তান পতন
লেখক: আহমদ ছফা
পার্সোনাল রেটিং :৩.৯/৫
পৃষ্ঠা সংখ্যা :৭৯
১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয় আহমদ ছফা রচিত উপন্যাস ‘একজন আলি কেনানের উত্তান পতন ‘।উপন্যাসে

মূলত উঠে এসেছে একজন মানুষের দাম্ভিকতা, অহংকারবোধ যা তাকে পাহাড়ের শীর্ষে থেকে একেবারে পাতালে ছুড়ে ফেলে। আরো উঠে আসে মাজার ব্যবসা।মানুষের বিশ্বাস, আস্থা এবং ধর্মভীরু কে পুঁজি করে দিনকে দিন ব্যবসা করছে। উপন্যাসটিতে মূল চরিত্র হিসেবে ছিল আলি কেনান।যাকে ঘিরে এই উপন্যাসটি।

আলি কেনান এর বাড়ি ভোলার তামাপুকুর এলাকায়। আলি কেনানের গ্রামে পাকিস্তানি গভর্নরের প্রবেশের দিনে গভর্নরকে মৃত্যুর পথ থেকে রক্ষা করে আলি কেনান।সেবার থেকেই আলি কেনানের ভাগ্য ফিরে।গ্রামের সাধারণ মানুষ থেকে সে পরিণত হয় গভর্নরের খাস পাত্রে।গভর্নিং হাউজের কেরানী হওয়া সত্ত্বেও গভর্নরের প্রায় সব দায়িত্ব তার কাছেই ছিল।এমনকি গভর্নরের ফোন রিসিভ করবার দায়ভারও ছিল তার কাছে।এর ফলে আলি কেনান নিজেকে গভর্নরের অবিচ্ছেদ্য অংশ ভাবতে শুরু করে এবং অহংকার তাকে গ্রাস করে,দাম্ভিকতা তার শিরায় শিরায় পৌঁছে যায়। কিন্তু কথায় আছে না, অহংকার পতনের মূল! ভাগ্যের চাকা ঘুরবেই। গভর্নর তাকে পথে ছুড়ে ফেলে দিলেন।
সে থেকে শুরু হলো আলি কেনানের নতুন অধ্যায়। সে উপলব্ধি করলো মানুষকে ধমকে ‘দে তর বাপরে একটা ট্যাহা দে’ বলে দিনে ১৩ টাকা করে উপার্জন করা যায়। তার মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি খেলে যায়। ফুলতলীর এক পুরনো কবরকে কেন্দ্র করে সে শুরু করে মাজার ব্যবসা।মানুষের অন্ধবিশ্বাস কে কাজে লাগিয়ে সে রাতারাতি বড়লোক হয়ে উঠে। তার মনে আবারো জন্ম নেই পুরনো অহংকার এবং দাম্ভিকতা। জমে উঠেছিল তার রমরমা মাজার ব্যবসা।কিন্তু তার কাল হয়ে উঠলো একজন বিলেত ফেরত নারী।
উপন্যাসটি তে লেখক আলি কেনানকে শেখ মুজিবের সাথে তুলনা করেছে।অনেক জায়গায় শেখ মুজিবের সাথে তাকে মিল রেখেছে।কোনো ভাবেই বুঝতে পারলাম না ঐ ধূর্ত, জোচ্চর, লোক ঠকানো আলি কেনানের সাথে শেখ মুজিবের মতো মহাপুরুষ এর কেন মিল রেখেছে। যদিও এক-দুটি মিল পাওয়া যায়।তা হলো : শেখ মুজিবের অনেক সমর্থক ছিল যারা তার কথায় জীবন দিতে একবারও ভাবে নি। আর এদিকে আলি কেনানেরও অনেক শিষ্য ছিল যারা তার জন্য সব করতো। আরো একটপড়তে বাধ্য হলো। দুজনেই তাদের শেষ পরিণতির সময় একা ছিল। দুজনের পিঠেই আপন মানুষ ছুরি বসিয়েছে।আলি কেনান নিজেকে ‘জয় বাংলার দরবেশ’ বলে পরিচয় দিয়েছে।এইটাও হয়তো তার উপর উঠে আসার নতুন ছল চাতুরী!
আমাদের সমাজে মাজার ব্যবসা ব্যপক হারে বেড়েছে। মানুষ তার বিশ্বাসের তাগিদে ছুটে আসছে মাজারে। টাল টাল টাকা ঢালছে।ঐ টাকা আত্মসাৎ করছে আলি কেনানের মতো ভন্ড সাধু। মানুষের বিশ্বাস যাদের ব্যবসার পুঁজি হয়ে দাঁড়ায়। মাজারকে কেন্দ্র করে এতো ব্যবসা তা আগে জানা ছিল না। উপন্যাসটির প্লট খুবই ভালো লেগেছে। যদিও অনেক অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করেছে। এটি একটু চোখে লেগেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button