বই রিভিউ ও ডাউনলোড
ধীরপায়ে ধূলিপথে সুমনকুমার দাশ বই রিভিউ
![dheerpaya dhulipathay pdf](https://pdfmela.com/wp-content/uploads/2021/05/dheerpaya-dhulipathay-pdf.jpg)
বই:- ধীরপায়ে ধূলিপথে
লেখক:- সুমনকুমার দাশ
![🏷️](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t75/1.5/16/1f3f7.png)
![🏷️](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t75/1.5/16/1f3f7.png)
![🔖](https://static.xx.fbcdn.net/images/emoji.php/v9/t8b/1.5/16/1f516.png)
বাতিঘর সিলেটে বইটি আসার দু’দিন পরেই গিয়ে দাদার নতুন বই “ধীরপায়ে ধূলিপথে” সংগ্রহ করে ফেলি।আমার পড়া দাদার পূর্বের বইগুলোর সাথে এই বইটির প্রথম যে বিশেষ দিকটি চোখ কেড়েছে, সেটা হলো-বইটির চোখধাঁধানো প্রচ্ছদ! বইটি যখন বাতিঘরের সেলফ থেকে হাতে নিলাম,তখনই এর প্রচ্ছদে মুগ্ধ হয়েছি।প্রচ্ছদশিল্পী যেন তার সকল ভালোবাসা উজাড় করে ঢেলে দিয়েছেন প্রচ্ছদে!তাই হয়তো প্রচ্ছদটি এতোটা চিত্তাকর্ষকরূপে উপস্থাপিত হয়েছে পাঠকের কাছে।এক্ষেত্রে প্রচ্ছদশিল্পী অনেকটাই সফল!
বইটি অনেক আগেই বাসায় নিয়ে আসলেও পড়া শুরু করি খানিকটা পরেই।যেদিন দাদার বইটি পড়া শুরু করলাম,সেদিন একটানা তিন ঘণ্টায় বইটা পড়ে শেষ করি।সবচাইতে আনন্দের বিষয় ছিল,ঐ একই দিনে লেখক সুমনকুমার দাশ ওনার চাকরিজীবনে পদোন্নতি লাভ করেন।সবকিছু মিলিয়ে ঐ দিনটি আমার কেটেছে দাদাকে স্মরণ রেখেই।
বইটি শুরু হয়েছে চন্দন-রেহানাদের গল্প দিয়েই।এই দম্পতি ছিলেন সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার পশ্চিম সুহিতপুর গ্রামের দুই জনপ্রিয় বাউলশিল্পী। সিলেটি আঞ্চলিক গান ও বিয়ের গীতের জন্য অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পী ছিলেন রেহানা।যিনি কিনা তার জীবদ্দশায় ৪০০ এর অধিক গান রচনা করেছেন।তার কণ্ঠে শোভা পেত গিয়াসউদ্দিন আহমদের লেখা সিলেটের অত্যাধিক
জনপ্রিয় এই গানটি ‘ওবা মনাই মামুনি’।কয়েকটা লাইনা ছিল এরকম—
‘গিয়াস পাগল কয় মামু,মরার আগে মর
গিয়াস পাগল কয় মামু,মরার আগে মর
দয়ো বউ রে তালাক দিয়া বাঁচার চিন্তা কর
দয়ো বউ রে তালাক দিয়া বাঁচার চিন্তা কর
ওবা মনাই মামুনি,তোমার ঘরের খবর জানোনি।’
………….. ………… …………. ………….
যে মানুষটি সারাজীবন সংগীতের মধ্যে বেঁচে রয়েছেন,সেই চন্দন মিয়া সংগীত নিয়ে বলেন—“সব বিদ্যার শেষ যেখানে,সংগীত শুরু হয় সেখান থেকে,এটা কঠিন জিনিস,সাধনার বিষয়।মঞ্চে উঠলাম আর গাইলাম,সেটা না।সাধনা ছাড়া সংগীত ধরা দেবে না।তুমি মন্ত্রী হইতে পারবায়,এমপি হইতে পারবায়,চেয়ারম্যান হইতে পারবায়,কিন্তু চাইলেই শিল্পী হইতে পারবায় না।”
চন্দন মিয়ার এই কথাগুলো যে কতোটা সত্য সেটা বর্তমান সময়ের কয়েকজন ভাইরাল শিল্পীর দিকে তাকালেই সহজেই অনুমেয়। ইস!আক্ষেপ লাগে!গুটিকয়েক সময়ের সেরা এই শিল্পীরা যদি চন্দন মিয়ার এই কথাগুলো হৃদয়ে লালন করতো,তাহলে হয়তো বাংলাদেশের সংগীতটা আরেকটু সুস্থ রকম ভাবে বেঁচে থাকতো এই প্রজন্মের নিকট!
এখানে,চন্দন মিয়া লেখকের সাথে আড্ডায় ‘শাহ আবদুল করিম’ এর সাথে তার কাটানো কিছু স্মৃতির কথা তুলে ধরেছেন।সেগুলো পড়ার পর মনে হয়েছে,কত সহজ-সরল জীবনে বেঁচে ছিলেন বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম!
বইটিতে উঠে এসেছে ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ গানটির কতকথা।এই অধ্যায়ে গানটির ইতিহাস নিয়ে কথা বলেছেন লেখক।গানের সাথে লেখক নিজের শৈশবের ঈদ-কেন্দ্রিক কিছু স্মৃতি অকপটে বর্ণানা করেছেন বইয়ে।
বইয়ের শেষ দুটি অধ্যায়ে লেখক মূলত ওনার ব্যক্তিগত কিছু স্মৃতিচারণ করেছেন।‘বাঁশের কুড়ল’ অধ্যায়টিতে লেখক তার বান্দরবন ভ্রমণের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেছেন।প্রথম বারের মতো বান্দরবান বেড়াতে গিয়ে সস্ত্রীক সেখানকার জনপ্রিয় খাবার ‘বাঁশের কুড়ল’ খাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন লেখক।এই অধ্যায়ের শেষে এসে লেখক কিছু রসাত্মক মুহূর্তের জন্ম দিয়েছেন এই লাইনগুলো উল্লেখের মাধ্যমে—
“সে যাই হোক,আমাদের এখানে(সিলেটে) যে কথায় কথায় ‘বাঁশ খাওয়া’ নামের একটি নেতিবাচক শব্দবন্ধের ব্যবহার হয়েছে,প্রকৃতই যে এই বাঁশ খাওয়া যায়-সেটা বান্দরবানে গিয়ে ভালোভাবেই টের পেলাম।”
“আমার দাড়াইন” অধ্যায়ে লেখক দাড়াইন নদের সাথে তার শৈশবের মজার সব স্মৃতিগুলো তুলে ধরেছেন। এই অংশে লেখকের সাথে আমার শৈশবও প্রায় মিলে যায়।পার্থক্য শুধু এটুকু-লেখকের স্মৃতিগুলো দাড়াইন নদকে ঘিরে,আর আমার স্মৃতিগুলো বাড়ির পেছনের ছোট আকৃতির সেই পুকুর কে ঘিরে।গ্রামকেন্দ্রীক যাদের বেড়ে ওঠা,তাদের প্রায় সবারই শৈশব স্মৃতির অন্যতম একটা অংশের মিল খুঁজে পাবে লেখকের এই বর্ণনায়।
সবশেষে এটাই বলবো—বইভুক্ত সবকটি অধ্যায় পাঠকের জন্য একেক রকম অনুভূতির অংশ হয়ে থাকবে।
পড়তে আপনাকে হবেই,হয় বই নয়তো পিছিয়ে!