বই রিভিউ ও ডাউনলোড

হিপোক্রিট অরুণ কুমার বিশ্বাস বই রিভিউ

▪️বই সম্পর্কিত তথ্যঃ
বই : হিপোক্রিট
লেখক : অরুণ কুমার বিশ্বাস
ধরন : উপন্যাস
প্রচ্ছদ : রাজীব রাজু
অঙ্গসজ্জা : মো. আলআমিন
প্রকাশক : পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.
প্রকাশকাল: নভেম্বর ২০২০
মুদ্রিত মূল্য: ২০০ টাকা
ISBN : 978-984-634-544-5

ব্যক্তিগত রেটিং : ৯.৫/১০

মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে রাখা মুখে সমাজ বাস্তবতার এক জলজ্যান্ত চিত্র ‘হিপোক্রিট’!

হরিণী যখন ঘুরঘুর করে বাঘের সামনে, বাঘ তখন থাবা না দিয়ে কি পারে? -নিশ্চয়ই পারে না! হিপোক্রিট উপন্যাসে রচিত হয়েছে এমন এক পটভূমি যেখানে একটু ভালোবাসা আর পরম সুখ পাওয়ার মোহে ভুল করে মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা পিশাচের কবলে পরা এক মাঝবয়সী নারীর অসহায়ত্বের গল্প। যে গল্পের শেষভাগে করুণাত্নক রস ছুঁয়ে যায় হৃদয়।

সূর্যোদয় থেকে শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলে জীবনের একেকটা দিনলীপি৷ এই দিনলিপি জুড়েই থাকে আমাদের পাওয়া না পাওয়ার কথামালা। অনেক সময় আমরা যেভাবে চাই নিজেকে সেভাবে পাই না এই দিনলিপিতে। ফলে হতাশা বেদনাগ্রস্ত হয়ে ভুল পথে পা বাড়াই। চাওয়া- না পাওয়ার দ্বন্দ্বে জীবনের আনন্দটুকু বেমালুম ভুলে যাই। ফলে অর্থহীন হয়ে পড়ে আমাদের যাপিত জীবন।

হিপোক্রিট উপন্যাসটি তেমনি চাওয়া না পাওয়ার গল্পে ভুল কাজে ভয়াল পরিণামে ভরে উঠেছে করুণাত্নক রসে! যেখানে উঠে এসেছে আশা-আকাঙ্ক্ষা, মায়া-মমতা, ভালোবাসা। আবার ভালোবাসার আড়ালে লুকিয়ে থাকা লোভ-লালসা, একাকিত্ব ও নির্মমতার গল্প। ফুটে উঠে সমাজ বাস্তবতার চিত্র।

তাই এটিকে এক অর্থে সামাজিক উপন্যাস বলা যায় আরেক অর্থে ব্যক্তি সম্পর্কের উপন্যাসও বলা যায়।

▪️বইয়ের নামকরণঃ

উপন্যাসে চার চরিত্রের মধ্যে তিন চরিত্রে হিপোক্রেসির সন্মেলন ঘটে। আর এই তিন চরিত্রে হিপোক্রিসির শিকার বাকি চরিত্র। তাই এদিক থেকে ‘হিপোক্রিট’ বইয়ের নামকরণ যথার্থ অর্থবহ।

আবার, বইটি এই নামকরণে প্রকাশ প্রসঙ্গে লেখক এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “হিপোক্রেট নাম হিসেবে একটু ব্যতিক্রমি কারণ নামটি রাখার আগে আমাদের অন্য একটি সারনেম ছিল ‘প্রেম নেই’। পরে মনে হলো যে প্রেম নেই নামটি অত্যন্ত নেতিবাচক। আসলে প্রেম আছে, বিভিন্ন পর্যায়ে আছে, প্রেম খুব ভালোই আছে। পরে মনে হলো যে না এটার যে উপজীব্য বা থিমেটিকালি এটাকে হিপোক্রেট হিসেবে আমার মনে হয় খুব যাবে।”

তাই, গল্পের প্লট আর চরিত্রগুলোর বিশ্লেষণ বইয়ের নাম ‘হিপোক্রিট’ হওয়া বইয়ের পরিপূর্ণ অর্থ বহন করে।

▪️সার সংক্ষেপঃ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশ্যাল সায়েন্স থেকে মাস্টার্স করা এক মাঝবয়সী নারী রুবা। যাকে ঘিরেই উপন্যাসের পটভূমি। এই চরিত্রকেই কেন্দ্র করে বিস্তৃত হয়েছে অন্যান্য শাখা-প্রশাখার চরিত্র! উচ্চ শিক্ষিত, মধ্যমানের ব্যবসায়ী আদনানের সাথে বিয়ে হয় রুবার। ওদের একটা বাচ্চা আছে। নাম মিমি। যার বয়স পাঁচ এর এদিক ওদিক। আদনান আর রুবার বিয়েটা অবশ্য প্রেমের নয়, ফ্রেমের। আই মিন মধ্যস্থতা বা দেখেশুনে তারপর দু’পক্ষের মত নিয়ে ধীরেসুস্থে অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ। বস্তুতপক্ষে রুবা আদনান কেউ কাউকে বিয়ে করেনি, অভিভাবকরা বিয়ে দিয়েছে। ফলত এটা সামাজিক বন্ধন, হৃদয়ের নয়। কারণ- আদনানকে বিজনেস নিয়ে দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করতে হয়। স্ত্রী’র প্রতি কেয়ারনেস হওয়ার সময় নাই তার! মাঝরাতে দুটি প্রাণ জেগে উঠলে দৈহিক সম্পর্ক তৈরি হলেও আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয় না। পরস্পর কেউ কাউকে মানিয়ে তুলতে পারে না। রুবা আদনানকে নিজের করে তোলতে চাইলেও আদনান ব্যস্ত তার বিজনেস নিয়ে।

এদিকে একাকিত্ব দূর করতে রুবা একটা স্কুলে শিক্ষতা শুরু করে। কিন্তু এটিও তার একাকিত্ব দূর করতে পারে না, রুবা স্বামী কাছ থেকে অবহেলার স্বীকার হতে হতে একটা আশ্রয় খুঁজে বেড়ায়। যেখানে শুধু দৈহিক মিলন মুখ্য বিষয় নয়, সুখ-দুঃখে একে অপরের পাশে থাকবে।
যার বুকে মাথা গুঁজে আপন মনে গল্প করবে। এমন আপনজন হবে যে তার কথাগুলো শুনবে, তাকে পর্যাপ্ত সময় দিবে, খোঁজ খবর রাখবে।

স্বামী আদনানের ব্যস্ততা, অবহেলা সারাক্ষণ রুবাকে একাকিত্বের যন্ত্রণায় ডুবিয়ে রাখতো। ঠিক তখনি তূর্য নামে এক অল্পবয়সী অর্থাৎ রুবার থেকে বয়সে ছোট যুবকের সাথে ফোনকলে পরিচয় হয় রুবার। তূর্য রুবা থেকে দশ বছরের ছোট।

কিন্তু তাতে কি যায় আসে! তূর্য কবিতা লেখা, ভালো আবৃত্তি করে, ছবি আঁকে, মোবাইলের ওপাশ থেকে তূর্য মিষ্টি কণ্ঠে আকষ্মিক বাচনভঙ্গিতে কবিতা আবৃত্তি করে যার ছন্দে ভেসে আছে রুবাকে যত্ন নেওয়ার কথামালা। এসব একটু একটু করে তূর্যর প্রতি দূর্বল করে দেয় রুবাকে। এক পর্যায়ে মুগ্ধ হয়ে তূর্যর প্রেমে পড়ে যায় রুবা। শুরু হয় একটু সুখের খোঁজে পরকীয়া! তারপর থেকে তার জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ কালো অধ্যায়। যে অধ্যায় রুবা আর বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে না।

আর তূর্য’র সাথে এ পরকীয়ার সম্পর্কের কথা জানানো হতো কাজিন অর্নাকে। অর্না রুবার সবচেয়ে কাছের বন্ধু বলে সব কিছু তার সাথে শেয়ার করতো, কখন কি হয় না হয়! আর অর্নাও তাকে সাপোর্ট করে যেত।

তূর্যর কুশলী চক্রান্তে ক্রমশ পাক খায় মধ্যবয়সের সংকটে মুহ্যমান রুবা। তূর্য এক পর্যায়ে তার আসল রূপ প্রকাশ করে। রুবা’র সাথে কাটানো অন্তরঙ্গ মুহূর্তে সময়গুলোতে গোপন ক্যামরায় ভিডিও করে ফেলেন। ভিডিওগুলো দিয়ে শুরু করে ব্ল্যাকমেইল। একে একে মোটা অংকের টাকা চাইতে থাকে রুবার কাছে। রুবা তার সর্বস্ব দিয়েও তূর্যকে থামাতে পারেনা। নিরুপায় হয়ে স্বামী আদনানের কাছে হাত পাতে যেখানে স্বামী আদনানের মৌনতা আর ধরাছোঁয়ার বাহিরে থেকে কলকাঠি নাড়ানোর মাধ্যমে নীরবে তূর্যর ফাঁদে ফাঁসিয়ে যাওয়ায় জন্ম নেয় গল্পের নতুন মোড়। যার শেষটা পাঠকের হৃদয়ে করুণ রস সঞ্চারণ করবে।

কিন্তু কেনই বা রুবা তূর্য’র জালে ফাঁসিয়ে যাবেন? কেন জীবন এত জটিল হয়ে উঠে! কেন রুবার উদাসী উড়ুক্কু মনটাকে কেউ বোঝে না! সে তো চেয়েছিলো তূর্যকে খুব কাছে পাবার। যে তাকে আদর-যত্ন করবে৷ দুঃখ সুখে সাথী হবে। তার বুকে মাথা গুজিয়ে কবিতা শুনবে! যেমনটা শুনিয়েছিলো মোবাইলের ওপাশ হতে।
শারীরিক সম্পর্কের আগে।

এসবের সমাধান মিলবে পুরো হিপোক্রিট উপন্যাস জুড়েই।

hippocrates book bangla pdf 909 1
hippocrates book bangla pdf 909 1

▪️চরিত্র বিশ্লেষণঃ

পুরো উপন্যাস জুড়ে সাতটির বেশি চরিত্র রয়েছ। এর মধ্যে চারটি রুবা, আদনান, অর্না, তূর্য রয়েছ মুল চরিত্রে অর্থাৎ উপন্যাস জুড়েই তাদের কথপোকথন চলে। বাকি রুবার মেয়ে মিমি, তূর্যর বাসার গলির চা দোকানদার, পুলিশের ইনস্পেক্টর রয়েছে সাব-চরিত্রে ও আলাপনের বাহিরে তূর্যর মেস মেম্বাররা।

কেন্দ্রীয় চরিত্র রুবা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাফল্যের সাথে মাস্টার্সে উত্তীর্ন হয়ে বিবাহিত জীবনে ঢুকে পড়লেন। একটি চাকুরিও খুঁজে নেন। একজন স্বাবলম্বী, উচ্চ শিক্ষিত, সুশ্রী, রীতিমতো কেতাদুরস্ত মেয়ে। এক সময় আদনানের সাথে চালচলন বদলাতে থাকে। মধ্যবয়সী সংকট আর একাকিত্ব যা-ই বলিনা কেন, ভুগতে থাকে। উচ্চ শিক্ষিত হয়া সত্বেও রুবা চরিত্রে মেধার সংকট, চৌকস আর হিতাহিত জ্ঞাণের প্রচন্ড অভাব লক্ষ করা যায়।

এই উপন্যাস আরেক অন্যতম ও মজার চরিত্র রুবার স্বামী আদনান। যাকে গল্পের কথোপকথনে খুব বেশি দেখা যায় না। অথচ, সে অনেকটা বাংলা ছায়াছবির খলনায়কের মত আলো আঁধারের মধ্যখানে লুকিয়ে থেকে সমস্ত ঘটনার কলকাঠি নাড়তে থাকে। উপন্যাসের শুরুর দিকে তাকে মনে হতে পারে এই গল্পের সবচেয়ে ভালো মানুষ। অথচ, উপন্যাসের শেষভাগে এসে পাঠক নিমিষেই বুঝতে পারবে আড়ালে লুকিয়ে থেকে কল কাঠি নাড়ানো এই চরিত্রটি কতটা ভয়ঙ্কর!

উপন্যাসটি এতটা বিস্তৃত আর ভয়ঙ্কর হওয়ার পেছনে অন্যতম চরিত্র অর্না। যে রুবার কাজিন আবার খুব ভালো বন্ধু। এই চরিত্রে দেখা যায় চৌকস ও চালিয়াতি। অর্না একদিকে যেমন রুবাকে ভালো করে চেনে অন্যদিকে রুবার স্বামী আদনানের সাথেও গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। এই সম্পর্ক শুধু ভাই-বোন (দুলাভাই-শালিকা) এজন্য নয়! পুরো উপন্যাস জুড়ে দেখাা যায় এই সম্পর্কের পেছনে জুড়িয়ে আছে লোভ লালসা, অর্থসম্পদ।

উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রের মধ্যে আরেরেকটি মজার এবং গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র তূর্য। যাকে কোন অবস্থাতেই গল্প হতে বাদ দেওয়া যায় না। সে ভালো ছবি আঁকে, কবিতা লেখে, কবিতা আবৃত্তি করে এসবে একটু একটু করে দুর্বল করে দেয় রুবাকে। এক সময় রুবার দুর্বলতার বাঁকে পুরোপুরি কাবু করে ফেলে রুবাকে। তারপর প্রকাশ পেতে থাকে তার আসল রুপ। সে কতটা পিশাচ আর হিপোক্রিট তা বুঝা যায় উপন্যাসের শেষভাগে এসে।

এর বাহিরেও রয়েছে আরো তিনটির বেশি সাব-চরিত্র।
রুবার পাঁচ বছরের মেয়ে মিমি। উপন্যাস জুড়ে শুধু তার নামটাই আছে কিন্তু এই চরিত্রের কোন কথোপকথন লক্ষ্য করা যায় না। আবার এই ভয়ংকর ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে উপন্যাসের শেষভাবে আবির্ভাব ঘটে পুলিশ ইনস্পেক্টরের। যার হাত ধরে এই ঘটনার রহস্য উদঘাটন হয়। এবং তূর্য যখন রুবাকে ফাঁদে ফেলে মেসে নিয়ে যায় তখন ভেতরে ঢুকার সময় গলির চা দোকানদারেরদ বলা একটা বাক্য পরিলক্ষিত হয়। এর বাহিরে অদৃশ্য আড়াল চরিত্রে রয়েছে তূর্য মেস মেম্বাররা যারা গণ ধর্ষণ করেছে রুবাকে।

▪️সমালোচনা ও বানান প্রসঙ্গেঃ

কিছু কিছু বই পড়তে গিয়ে দেখা যায় অসংখ্য বানান ভুল থাকে ফলে পাঠকের জন্য সে বই আনন্দ থেকে বরং বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। কিন্তু এই বইতে বানান ভুল ক্রুটি তেমন চোখে পড়ে নাই। থাকলেও তা যৎসামান্য। বইয়ের শুরুর দিকটা একটু ধীর গতি আর শেষের দিকে একটু দ্রুতগতি এগিয়েছে বলে মনে হলো, পাঠককে বইয়ের পাতায় আটকিয়ে রাখতে এটি বাঁধা হয়ে থাকে! আর রুবা চরিত্র একটু বেশিই দুর্বল হয়ে গেছে মনে হলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা একটা শিক্ষার্থী এত সহজে শত্রুর ফাঁদে পড়ে যাওয়ার কথা নয়। তার স্বামীর কাছে টাকা চাহিবা মাত্র দিয়ে দিলো কেন? এসব একটু চিন্তাভাবনা করবে না! সে যখন বুঝতেই শুর করল তূর্য স্রেফ তাকে ভালোবাসা নয় ভোগ করার জন্য ব্যবহার করছে। তখন হরিণী হয়ে সে আপনাআপনি কেন বাঘের কাছে ধরা দিলো?

▪️পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ

আমাদের সমাজের অফিস আদালত থেকে শুরু করে পরিবার। আবার পাবলিক প্লেস থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সবখানে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঘুরে বেড়াচ্ছে হিপোক্রিট’রা। যারা মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে রাখে তাদের ভয়ংকর সত্যকে। নিজেদের সুযোগমত তার খোলস উন্মেচন করে দেখায় তার ছোবল! ঠিক রুবা-আদনানের পারিবারিক হিপোক্রিট গল্পও তার একটি অংশ। এই উপন্যাস পড়তে গিয়ে বারবার আমি আশেপাশে অসংখ্য রুবা, অর্না, তূর্য, সুকৌশলি চাক্ষুষ আদনানকে খুঁজে পেয়েছি। লেখকের স্বার্থকতা এই জায়গায় যে, একটা গল্পে সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে পেরেছেন। মিথ্যার আড়ালে লুকিয়ে রাখা কতটা ভয়ংকর সত্য থাকতে পারে তা লেখক পাঠকের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।

লোক মুখে নাম শুনেছি অরুণ কুমার বিশ্বাসের। তিনি নাকি কিশোর উপন্যাস আর ডিটেকটিভ থ্রিলার লেখেন। কিন্তু তার বই পড়া হয়ে ওঠে নাই। তার লেখা বইয়ে এটিই আমার প্রথম পড়া। বলতে পারি, পাঠক হয়ে প্রথম পড়া বইতে মুগ্ধ হতে ফেরেছি। কারণ- আমরা যখন একটা বই টাকা দিয়ে সংগ্রহ করি তখন আমাদের একটা এক্সপেক্টেশন থাকে, আমরা এতটুকু পেতে চাই, এই এই পেতে চাই, একই সাথে আনন্দ ও শিক্ষা পেতে চাই। সেক্ষেত্রে বলব পাঠক হিসেবে লেখকের কাছ থেকে সর্বোচ্চটা পেয়েছি। আবার লেখক হিসেবে তার সফলতা ও সমাজের কাছে দায়ভার থাকে, প্লটটি ব্যক্তি জীবনে কোন ইতিবাচক ভুমিকা রাখতে পারবে? সমাজের সঠিক চিত্র কলমের কালিতে তুলে ধরতে পারবে? যদি ব্যক্তি জীবনে প্রভাব না ফেলতে পারে তাহলে সেটি ব্যর্থ রচনা! -সেক্ষেত্রেও বলব, লেখক সফল। কারণ- এই গল্পে রুবার করুণ দশার মাধ্যমে আমাদের সমাজ পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে। বিশেষ করে নারীরা, সহজে পরকীয়া আর ভুলজনকে ভালোবাসা পরিণাম কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা আচঁ করতে পারবে। চমৎকার উপন্যাস এক কথায় যদি বলি, মাস্টারপিস!

▪️উপন্যাসের শিক্ষাঃ

প্রতিটি সামাজিক ও ব্যক্তি সম্পর্কের গ্রন্থে কিছু শিক্ষা থাকে সমাজের জন্য। এটি তার ব্যতিক্রম নয়। আমাদের সমাজ পরিবর্তনে বেশ কিছু শিক্ষা রয়েছে বইটিতে নিচে তার কয়েকটি দেওয়া হলো।

১. বিয়ের সম্পর্ক নিছক শারিরীক সম্পর্ক নয়। দুটি মন এক হওয়ার বাঁধন এখানে একে অপরের প্রতি থাকতে হবে, প্রেম ভালোবাসা, মায়া-মমতা, শ্রদ্ধাবোধ।

২. কাউকে বিশ্বাস করার আগে ভালোকরে জেনে বুঝে সম্পর্ক (টাকা-পয়সা লেনদন থেকে ব্যবসায়িক কাজ যে কোন ক্ষেত্রই) করতে হবে।

৩. পরকীয়া সমাজ এবং জাতির জন্য নিকৃষ্টতম কাজ। এর পরিণাম কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা রুবা চরিত্র থেকে সহজে শিক্ষানীয়।

৪. হাসি-খুশি আর মিষ্টি মুখের লুকিয়ে থাকতে পারে তার ভয়ংকর রুপ। যা সুকৌশলি তূর্য আর চৌকস অর্নার মাধ্যমে শিক্ষানীয়। তাই ভালো করে জেনে শুনে কাজ করতে হবে।

৫. একটা ভুল সিদ্ধান্তের পরিণাম অনেক ভয়ঙ্কর হতে পারে। তা পুরো উপন্যাসের প্লট জুড়েই শিক্ষানীয়।

▪️বইয়ের কিছু প্রিয় উক্তিঃ

১. “তাপমাত্রা বা বায়ুর চাপ মাপার মতো করে সুখ পরিমাপের জন্য তো কোনো ব্যারোমিটার নেই।”

২ “মানুষের অনেক রূপ, হাজারো চেহারা। কোনটা মুখ, আর কোনটা তার মুখোশ কে জানে!”

৩. “সম্পর্ক তো আর আয়োডিন মেশানো লবণ নয় যে দুটাকা ফেলে দিয়ে কিনে নিয়ে আসবেন।”

৪. “মুখভর্তি চুনকাম আর গায়ে দামি ড্রেস চাপালেই স্মার্ট হওয়া যায় না। ওটা ভিতরে থাকতে হয়। ফ্যাশন ও স্টাইল এক নয়। ফ্যাশন সামাজিক, কিন্তু স্টাইল ব্যক্তিক।”

৫. “যে মন কবিতা লেখে, বা যে হাত তুলির আঁচড়ে সাজায় বর্ণিল স্বপ্নছবি, সে কখনো খারাপ হতে পারে না।”

▪️একটা প্রশ্নের মাধ্যমে শেষ করি, কিন্তু কেন আপনি বইটি পড়বেন? -আমার আপনার চারপাশে যে মানুষগুলোকে আমরা দেখি, তার বাইরেও আড়ালে থেকে যায় অন্যকোন মানুষের অচেনা অবয়ব। যারা আপনার একটু দূর্বলতার আশ্রয়ে ভয়ঙ্কর পিশাচ হয়ে উঠতে পারে যেকোনো সময়। যেমনি হয়েছে উপন্যাসের রুবার ক্ষেত্রে। কিন্তু রুবা তাদের চিনতে বড্ড দেরি করে ফেলেছে। ততক্ষণে তার জীবনে নেমে এসেছে কালো অধ্যায়। হয়ত, আপনি সে বিষয়ে একটু সাবধানতা পেতে পারেন আগে থেকেই। জীবনকে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে ফিরে দেখার এক দৃষ্টান্ত পাবেন উপন্যাসটি জুড়ে। তাই পড়তে পারেন ‘হিপোক্রিট’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button