বই রিভিউ ও ডাউনলোড

রিস্টার্ট ইয়োরসেল্ফ Pdf Download – Restart yourself bangla pdf

Restart yourself bangla pdf book by Javhed Parvej pdf download

রিস্টার্ট ইয়োরসেল্ফ – pdf download link


আরও পড়ুনঃ

বইঃ কাক
লেখকঃ আহমেদ ফারুক
রিভিউঃ চাতকী রূপা
প্রতিটি মানুষের জন্ম মৃত্যুর পদ্ধতি একই। ভিন্নতা শুধু এই দুইয়ের মধ্যকার সময়টায়। কিছু মানুষের চাওয়া খুবই সামান্য, দুমুঠো খেয়ে একটুখানি বাঁচাই তার স্বপ্ন। কেউ ভালবেসে নিঃস্ব হয়, কেউ বা শুধুমাত্র ভালবাসার জন্য নিজের সততাকে বিকিয়ে দেয় না। কারো কয়েক মিনিটের অনুভূতি হারিয়ে যায় মেঘের আড়ালে। কেউ জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে আপনজনদের। আবার ভদ্রলোকের মুখোশে নিজেকে আবৃত করে নেয় কোনো মানুষরূপী জানোয়ার। কেউ পাপ দমন করতে পাপের পথেই হাঁটে। ভুল বিচারের কাঠগড়ায় কারো স্বপ্নটাই ধুলোয় ঢাকা পড়ে।
মোট চৌদ্দটি গল্প নিয়ে রচিত ‘কাক’ বইটিকে সার্থক একটি গল্পসংকলন বলা যায়। বইয়ের প্রতিটি গল্পেই হৃদয়স্পর্শী কিছু ঘটনার সাক্ষর রেখে গেছেন কথাসাহিত্যিক আহমেদ ফারুক। অতি সাধারণ ঘটনাও তার নিপুণ বর্ণনার ছোঁয়ায় অসাধারণ হয়ে উঠেছে অতি সহজেই।
ছিঁচকেচোর, ভিখিরি, জেলখাটা খুনের আসামী, খবিশ ধরনের মানুষেরা কখনো গল্পের মূল চরিত্র হয়? হয়। এমন কিছু চরিত্র নিয়ে তিনি গল্পগুলোকে সাজিয়েছেন যা ভাবনারও অতীত। বইয়ের প্রতিটি গল্পের নামকরণও সার্থকতা পেয়েছে। প্রথমেই আমি বইয়ের শেষ গল্পটি নিয়ে আলোচনা শুরু করব। যে গল্পের প্রথম লাইনটাই আমাকে মুগ্ধ করেছে।
★ ধুলোয় ঢাকা চাঁদ- গল্পের শুরুটা হয়
‘গতকাল দুপুরে একটা নীল প্রজাপতি উড়ে আসে জেলখানায়’ এই উক্তিটির মাধ্যমে। গল্পটি ২০০৭ সালে ‘কাক’ বইটিতে প্রকাশিত হওয়ার আগে সমকালের সাহিত্য সাময়িকী ‘কালের খেয়ায়’ প্রকাশিত হয় এবং ২০১০ এ Daily Star পত্রিকার ‘special issue 12th anniversary’ তে আহমেদ হোসাইন নামের এক ভদ্রলোক এটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন ‘The Blue butterfly’ নামে।
মিথ্যে খুনের দায়ে অভিযুক্ত আসামী আসিফ ইকবাল গল্পের প্রধান চরিত্র। গল্পটা লেখক এমন একটি দৃষ্টিকোণ থেকে লিখেছেন যে, অবাক হতেই হয়। এতটা বাস্তবসম্মত হয়ে উঠেছে গল্পটা। শেষ লাইনটুকু চোখের জল আটকে রাখার ক্ষমতার উর্ধ্বে।
জেলার সাহেব বলেন, কি ব্যাপার, যাননি? এ শহরে আপনার কেউ নেই?
তিনি কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে শুধু বলেন, বাইরের পৃথিবীটা এখন আর আমার জন্য অপেক্ষা করি নেই।
★ যখন কৃষ্ণপক্ষ আসে- গল্পের প্রধান চরিত্র ওসি একরামুদ্দৌলা সভ্য মানুষের মুখোশে আবৃত একজন অপরাধী। নিজে অপরাধী হয়েও কেমন পার পাওয়া এই লোকটা আলীমুদ্দি নামের এক ছিঁচকেচোরকে সাজা দিতেই, চোরটা তার পকেট থেকে একটি মোবাইল বের করে ওসিকে দেয়। ফলে ছাড়াও পেয়ে যায় সে। সিম বিহীন অদ্ভুত সেই ফোনে নাম্বারহীন ‘reality of soul’ নামের একটি ফোনকল তাকে ষোলো বছর পূর্বে ফিরে যেতে বাধ্য করে।
★ কাক- পর পর তার তিনজন স্ত্রীর সন্তান হতে গিয়ে মৃত্যু, অবশেষে অল্পবয়সী চতুর্থ স্ত্রী সারথির সন্তান জন্ম দেয়া, বিষয়টি রহস্যময়। তিনি স্ত্রীকে কাকের গল্প শোনান, অথচ তিনি নিজেই একজন কাক। কাকের জীবন বৈচিত্র কীভাবে একজন মানুষের জীবনের প্রতিচ্ছবি হয়, সেটাই ফুটে উঠেছে গল্পটায়। কাকের বাসায় কোকিল ডিম পাড়ে, আর কাক নিজের ডিম মনে করে তা দিতে থাকে। কিন্তু বাচ্চাগুলো যখন ডাকতে শিখে, তখন কাক ঠিকই বুঝে যায় ওগুলো কোকিলছানা।
গল্পের শেষ লাইনটায় একজন মানুষের অসহায়ত্বের করুণ দৃশ্য ফুটে উঠে, ‘ইরতাজ উদ্দিন বলেন, আমি কাক নই, আমি মানুষ।’
★ লেখক- একসময়ের লেখক সত্তাকে অভাবের বিনিময়ে বিক্রি করে এক বিদেশিনীর নিকট দাসত্ব বরণ করেন রুবাইয়াত সাহেব। সব হয়, কিন্তু মুক্তি মেলে না দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে। পঁয়ত্রিশ বছর পর তারই মতো লেখক হবার স্বপ্ন চোখে এক বেকার যুবকের সাথে দেখা হয় বইমেলায়। তিনিই চাকরি দেন ইবুকে। কিন্তু ধার করা সৃজনশীলতায় কি কোনো আনন্দের রেশ থাকতে পারে?
‘আমি ‘স্বপ্নবাড়ি’ গল্পের জন্য জাতীয় পুরষ্কার পেয়েছি।’
‘এ তো আনন্দের কথা। তুমি খুশি হওনি?’
‘না।’
‘কেন?’
‘কারণ যে লেখকের সত্তা আমি আমার মাঝে বহন করি তা আমার নয়। আমি একজন বাহক মাত্র।’
★ রক্তসাপ- রূপগঞ্জের বনশ্রী খালের ঝোপে ভেরেণ্ডার বিচি খুঁজতে গিয়ে মইনুল নামের এক ছোট ছেলে খুঁজে পায় মানুষের খুলি। অনেকের ধারণা, ৭১- এর ১৪ ডিসেম্বর গ্রামের অনেক মানুষ নিখোঁজ হয়, এগুলো তাদের দেহাবশেষ। এলাকার দায়িত্বরত ওসি একরামুল ইসলামের তদন্তে বেরিয়ে আসে একটি নির্মল সত্য। একে একে তিনি রাজাকারদের তালিকা তৈরি করেন।
‘আসলে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার দরকার নেই, দরকার রাজাকারদের তালিকা। এই তালিকার বাইরে সবাই মুক্তিযোদ্ধা। আমাদের দেশে শহীদদের সম্মান দেখানোর জন্য সৌধ নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু দেশদ্রোহীদের ঘৃণা করার জন্য কোন ‘ঘৃণা স্তম্ভ’ তৈরি হয়নি।’
★ শবেরা যখন মৃত- দেশের প্রখ্যাত নাট্যকার হুমায়ুন মৃধা বলাৎকারের বিরুদ্ধে এক আন্তর্জাতিক সংস্থার নাটক তৈরির দায়িত্ব পান। কিন্তু কিছুতেই নাটকের দৃশ্য মেলাতে পারেন না তিনি। ক্লোজ দৃশ্য কল্পনা করতেই তার অস্বস্তিবোধ হতে থাকে। তার স্ত্রী বাসায় নেই, আছে শুধু একজন। তিনি দরজার পাশের করিডরের দিকে এগিয়ে যান।
‘এবার তিনি বাস্তব নাটক লিখবেন। শুধু অন্ধকারে ক্যামেরার পেছনে পড়ে থাকবে ষোড়শীর দীর্ঘশ্বাস, আর্তচিৎকার আর অসহায় আত্মসমর্পণের গল্প।’
★ মেঘেশ্বরী- সামর্থ্যহীন ছেলেটা বেশ শখ করেই ভলভো বাসের ব্যয়বহুল একটি টিকিট কেনে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। পরিচয় হয় একটি মেয়ের সাথে। নাম, মেঘেশ্বরী। কিন্তু সব পরিণতি কি ভালবাসায় হয়?
‘৪০ বছর নয়, কিছু কিছু আবেগ ৪ মিনিটে অনেক গভীর হয়ে যায়।’ আকাশে সাদা মেঘ হয়ে উড়ে যায় মেঘেশ্বরী। ইবুরও ভাসতে ইচ্ছে করে মেঘের ডানায়।
★ একা একা- একাশি বছরের ওমিছা বেগম নামের এক বয়োবৃদ্ধার একা নিঃসঙ্গতায় কিংবা মৃত্যুর অপেক্ষায় বেঁচে থাকার গল্প। ছেলে নাতি নাতনি সবাই থেকেও নেই। তাকে সবাই ভয় পায়, ডাইনি ভেবে। তিনি ভাবেন, আসল ডাইনি কে? তিনি নাকি নিঃসঙ্গ এক মহিলার সাথে সম্পর্ক ছিন্নকারী তার ছেলের বউ। চলে যাবার অন্তিম মুহুর্তে অপেক্ষা করেন কারো আসার। কেন জানি মানুষটাকে তার ছেলে মনে হয়। কিন্তু তিনি তো তার ছেলের অপেক্ষা করে নেই!
★ ভিক্ষুক- আচ্ছা, ভিক্ষুক মানে কী? যে ভিক্ষা করে। কিছু নেই যার, নিঃস্ব। সে-ই তো ভিক্ষুক তাই-না? আচ্ছা, কেমন ভিক্ষুক হলে ভিক্ষা পাওয়াটা নিশ্চিত হয়? প্রশ্নটা ঘুরতে থাকে ইবুর মনে। নইলে শিমিকে তার কাছে ভিক্ষা চাইত।
★ অন্য মানুষ- তিন কোটি টাকার প্রত্ন সামগ্রী চোর, ভারপ্রাপ্ত খন্দকার নূরন্নবীর কাছে এসে নিজের দোষ স্বীকার করে সেগুলো ফেরত দিয়ে যায়। তার বিশ্বাস হয় না, একটা বই কীভাবে একজন মানুষের ভেতরের মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে তুলতে পারে? এই বইটি তো তাহলে দেশের প্রধানমন্ত্রী, রাঘব বোয়ালদের পড়ানো উচিৎ! মোনারুল বহুদিন পর মানসিক শান্তি পায়। মনে হয় এইমাত্র জন্মেছে সে। অন্ধকার গলির মাথায় এসে থমকে যায় সে। চারটি ভয়ংকর চেহারা এগিয়ে আসে তার দিকে। তারা মানুষ না, অন্যকিছু।
★ জোছনা ছুঁয়ে যাই তবু- ৫৬ বছরের এক ঝাড়ুদারের বর্ণনার মাধ্যমে গল্পে প্রবেশ ঘটে। যিনি নিয়মানুযায়ী পাপ পরিষ্কার করতে পারেনি অথচ রোজ রাস্তা পরিষ্কার করে। নোংরা ডাস্টবিনের পাশে পড়ে থাকা জন্মপরিচয়হীন একটি শিশু কুড়িয়ে পায় সে। কিন্তু কে এর মা? হয়তো কোনো এক পতিতা। যিনি চান না, তার সন্তান তার পরিচয়ে বড় হোক। কেউ একজন নিশ্চয়ই কুড়িয়ে নেবে ভেবেই হয়তো রেখে গেছেন! তার পরিচয়ের চেয়ে মিথ্যে পরিচয় অনেক ভালো।
‘শিশুর মায়ের ব্যথাটা প্রাকৃতিক নিয়মের। জারজ হোক অথবা নিয়মতান্ত্রিক। মাতৃত্বের নিয়মে কোনো পরিবর্তন নেই।’
বইঃ কাক
লেখকঃ আহমেদ ফারুক
ক্যাটাগরিঃ গল্পগ্রন্থ
প্রকাশনীঃ প্রিয়মুখ
পৃষ্ঠাঃ ১১২
মূল্যঃ ২০০৳

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button