বই রিভিউ ও ডাউনলোড
আদর্শ হিন্দু হোটেল উপন্যাস Pdf Download
আদর্শ হিন্দু হোটেল উপন্যাস Pdf Download – adarsha Hindu Hotel book by Bibhutibhushan Banerjee pdf Download
book | আদর্শ হিন্দু হোটেল |
Author | বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় |
Publisher | মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স প্রাঃ লিঃ (ভারত) |
ISBN | 8172934408 |
Edition | 14th Edition, 2012 |
Number of Pages | 151 |
Country | ভারত |
Format | Free Bangla Pdf book Download (পিডিএফ ডাউনলোড), epub, kindle MOBI |
আদর্শ হিন্দু হোটেল read online
adarsha Hindu Hotel book by Bibhutibhushan Banerjee pdf Download
‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’— একটি স্বপ্নময় জীবনের ইতিবৃত্ত। ভূমিকার ভূমিকায়ঃ
অর্ধচন্দ্রের নিঝুম রাত্রি কিবা সূর্যতাপে উত্তপ্ত উজ্জ্বল দিন, কুয়াশায় আবৃত সোনালি সকাল কিবা কোলাহলময় ব্যস্ত অপরাহ্ন— আঁতুড়ঘরে সদ্য আগমন করা নবীন শিশুর ওয়া ওয়া চিৎকারই বলে দেয় ভূপৃষ্ঠের উপরিতলে সংগ্রামী প্রচেষ্টা ব্যতিরেকে দিনানিপাত করার প্রত্যাশা নির্ঘাত নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক। একজন মানুষের নির্বাক শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ হয়ে ওঠার প্রতিটি মুহূর্ত নানান চড়াই উতরাই পেড়িয়ে যাওয়ার একেকটি নিশ্চুপ উপাখ্যান। জীবনের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে আকস্মিক হতাশায় আচ্ছাদিত অমানিশার সরব উপস্থিতি; তা তো বলাই বাহুল্য। তবুও, জীবনজয়ী কতক মানুষ হতাশার কুচকুচে আঁধারকে প্রত্যাশার দীপ্ত কিরণে রূপান্তর করে এক বুক স্বপ্ন নিয়ে এগুতে থাকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতে একটি নিশ্চিত ঠাঁই খোঁজার লক্ষ্যে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখিত ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’ উপন্যাসের মূল চরিত্র হাজারি দেবশর্মা উল্লিখিত স্বপ্নজয়ী মানুষের একটি যথার্থ প্রতিমূর্তি।
মূল বিষয়বস্তুঃ
খাদ্য, পানি ও বাতাস— মানুষের বেঁচে থাকার প্রত্যক্ষ উপকরণ কিবা সম্বল। শারীরিক প্রয়োজনে মানুষ এই তিনটিকে কখনোই হেলা করতে পারবে না। তবে, মানুষের শারীরিক বেঁচে থাকাই তো শুধু বেঁচে থাকা নয়, বরঞ্চ তার পাশাপাশি আত্মিক বেঁচে থাকা আপাতদৃষ্টিতে অনর্থক বোধ হলেও তা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয়। আর, শারীরিক সুস্থতার জন্য যেমন খাদ্য, পানি ও বাতাস প্রয়োজন তেমনি আত্মিক স্বচ্ছন্দের জন্য ঠিক ততটাই কিবা তারচেয়েও বেশি প্রয়োজন এক বুক নিখাদ স্বপ্নের। ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’ উপন্যাসে হাজারি ঠাকুরের সফলতা জীবনে স্বপ্নের তাৎপর্য কতটুকু তা হাড়ে-হাড়ে টের পাইয়ে দেয়।
পার্শ্ববর্তী পর্যালোচনাঃ
স্বপ্ন। দু’বর্ণের ছোট্টো একটি শব্দ। উচ্চারণে সহজ আর আকারে ছোটো হলেও স্বপ্ন শব্দটিতেই মানুষের জীবন রহস্য ঘনিভূত। স্বপ্নই মানুষকে সম্মুখ পথে অগ্রসর হওয়ার সাহস জোগায়। বেঁচে থাকার প্রেরণা আর সফলতার সার্থকতা সেই মানুষটিই পেয়ে থাকে যার আছে এক বুক স্বপ্ন। স্বপ্নহীন মানুষ ডানা ভাঙা পাখির মতন, যে ইচ্ছা সত্ত্বেও উড়তে পারে না। আর স্বপ্নহীন জীবন তুষারপাতে আবৃত অনুর্বর ভূমির মতো। যার বিশালতায় কোনো মূল্য নেই। যেমনটি বলেছেন ইংরেজ কবি Langston Hughes—
Hold fast to dreams
For if dreams die,
Life is a broken winged bird
That can not fly.
Hold fast to dreams
For when dreams go,
Life is a barren field
Frozen with snow.
প্রশান্তচিত্তের কথনঃ
‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’ উপন্যাসে হাজারি ঠাকুরের ধৈর্য, সহ্য ও ক্রোধ প্রশমন— অনন্য এই গুণ তিনটির কথা আমি সর্বপ্রথম উল্লেখ করব। রাণাঘাটের রেলবাজারে বেচু চক্কত্তির হোটেলে রসুয়ে বামুন হাজারি ঠাকুর শত অবজ্ঞা, তিরস্কার, ঘৃণা, অপমান সহ্য করে নির্বাক নিজের কার্য যথোপযুক্ত সাধন করছেন। তবুও, একদিকে স্বয়ং বেচু চক্কত্তির ধমক অপরদিকে ঝি পদ্মদির সর্বক্ষণ তিরস্কারের বুলি।
যে হাজারি ঠাকুরের চচ্চড়ির লোভে চক্কত্তির হোটেলে গ্রাহকের ভিড় লেগে থাকে সেই হাজারি ঠাকুর দুপুরের খাবারে কখনোই নিজের ভাগটুকু পুরোপুরি পেতেন না। এত উপেক্ষা, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার পরও হাজারি ঠাকুর তাদের বিরুদ্ধে উঁচু গলায় দু’টো শব্দ বলেননি, অভিযোগ কিবা নালিশও করেননি। এ থেকেই হাজারি ঠাকুরের পাথর কঠোর ধৈর্য, সহ্য ও ক্রোধ উপশমের বাস্তব প্রমাণ মেলে।
কৃতজ্ঞতা বোধঃ
মাসিক সাত টাকা বেতনে হাজারি ঠাকুর বেচু চক্কত্তির হোটেলে কাজ করেন। যদিও নানাবিধ তুচ্ছ কারণে চক্কত্তি হাজারি ঠাকুরের বেতন থেকে ইচ্ছেমতো জরিমানা নিতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। এত কিছুর পরেও হাজারি ঠাকুরের হিন্দু হোটেলে থেকে যাওয়া এক বিস্ময় ব্যতিরেকে কিছু নয়। যেদিন পাশের হোটেলের মালিক যদু বাড়ুয্যে মাসিক দশ টাকা পারিশ্রমিক ও খোরাকী সহ আরো নানাবিধ উপঢৌকনের আশ্বাস দিয়ে হাজারি ঠাকুরকে তার হোটেলে নিয়োজিত করতে চাইলেন সেদিনই তিনি বাড়ুয্যের হোটেলে যেতে পারতেন। কিন্তু, দস্তুরমতো অবাক হলেও হাজারি ঠাকুর পাঁচ বছরের অন্নদাতা বেচু চক্কত্তিকে ত্যাগ করে এভাবে চলে যাননি। বর্তমানে ক’জন মানুষের মাঝে এমন স্বার্থহীন কৃতজ্ঞতা বোধ পরিলক্ষিত হয়?
যোগ্যতার মূল্যায়নঃ
ইদানীন্তন আমাদের সমাজে অনেক সার্টিফিকেটধারী জ্ঞানী আছে কিন্তু প্রকৃত যোগ্যজনের খোঁজ পাওয়া বেজায় দুষ্কর। অথচ, নিখাদ যোগ্যতা কখনোই অবমূল্যায়িত হয় না। আমার এই কথাটির প্রকৃষ্ট উদাহরণ স্বয়ং হাজারি ঠাকুর। মিথ্যে চুরির দায়ে বেচু চক্কত্তির হোটেল থেকে বহিস্কৃত হওয়ার পর গোপালনগরে কুণ্ডুবাবুদের বাড়ি সহ হাজারি ঠাকুর যেখানেই গিয়েছেন সেখানেই তিনি অনুপম রন্ধনশিল্পের প্রদর্শনী দেখিয়ে সবার হৃদয়ের মণিকোঠায় স্থান নিয়েছেন। হাজারি ঠাকুরের মতো আজকের শিক্ষার্থীরাও যদি তাদের একক যোগ্যতা বুলন্দ করত তাহলে তারাও যে যথাস্থানে নিরঙ্কুশ গ্রহণযোগ্য হতো; তা কি আর বলতে হয়!
নিখাঁদ ভালোবাসার নজরানাঃ
রাণাঘাটে হাজারি ঠাকুর বিধবা কুসুমকে নিজের মেয়ে টেঁপির মতো জ্ঞান করতেন, তাকে স্বার্থহীন ভালোবাসতেন। নিজের খাবারটুকু নিজে না খেয়ে কুসুমের মুখে তুলে দিতেন। হাজারি ঠাকুরের তরফ থেকে অকৃত্রিম স্নেহ-মমতা পেয়ে কুসুম হৃদ গহীনের ভালোবাসা থেকে হাজারি ঠাকুরকে স্বপ্ন পূরণের জন্য তার গহনা বিক্রি করে টাকা দিয়েছিল। তবে, হাজারি ঠাকুর শুধু কুসুমকেই নয় বরঞ্চ শ্রীচরণ ঘোষের বাড়ির বধূটিকেও নিজের মেয়ের মতো ভালোবেসেছিলেন। তাই তো তিনি পুরোদস্তুর সফল হয়েও দু’-আড়াই বছর পর মেয়েটির সাথে দেখা করতে গিয়ে আদুরে স্বরে বলেছিলেন—’সাবিত্রীসমান হও মা।’ আর, হরিচরণবাবুর মেয়ে অতসীর কথা আলাদাভাবে না বললেই নয়। নিজের জমানো দু’শো টাকা সে নির্ভয়ে হাজারী ঠাকুরের হাতে তুলে দিয়েছিল কি এমনি এমনি?
দিবাস্বপ্নের বাস্তব প্রস্ফুটনঃ
চুর্ণী নদীর ধারে পরিচিত গাছতলায় কিংবা রাধাবল্লব তলায় নাটমন্দিরে একা একা বসে হাজারি ঠাকুর যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই স্বপ্ন বাস্তবে প্রস্ফুটিত হয়েছে তার সৎকর্মের দরুন। বেচু চক্কত্তির হোটেলে যখন বাসি খাবার, পঁচা সবজির তরকারি খদ্দেরকে দেয়া হতো তখন তিনি মনে মনে আওড়াতেন যে নিজের হোটেলে এরকমটা কখনোই করবেন না। তিনি মানুষকে না ঠগিয়ে উত্তরোত্তর উন্নতি সাধন করবেন। হাজারি ঠাকুরের এই সদিচ্ছার প্রকাশ ঘটাতেই হয়তো প্রভু তার স্বপ্ন পূরণ করে তাকে রাণাঘাটে সবচে’ নামকরা দু’টি হোটেলের মালিক বানিয়ে দিয়েছিলেন। কর্তৃত্ব দিয়েছিলেন তার পূর্বের মনিব বেচু চক্কত্তি ও সবসময় তিরস্কার গাওয়া পদ্মঝির উপরে। এবং, শেষতক দেড়শ’ টাকা বেতনের চাকুরির অধিকারী। এতসব সম্ভব হয়েছে হাজারি ঠাকুরের স্বচ্ছ ইচ্ছা ও এক বুক স্বপ্নের কারণেই।
সাদৃশ্য নিরূপণঃ
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’ সত্যিকার অর্থেই বাংলা সাহিত্যের একটি অনুপম সৃষ্টি। তাঁর উপন্যাসে সচরাচর গ্রাম-গঞ্জের কাহিনী ফুটে উঠলেও ‘আদর্শ হিন্দু হোটেলে’ শহুরে দৃশ্যপটের আঁচ পাওয়া যায়। জীবন সংশ্লিষ্ট এই উপন্যাসটির সাথে আমি বিশ্বখ্যাত ব্রাজিলিয়ান লেখক পাউলো কোয়েলহো’র ৬৫ মিলিয়নের বেশি বিক্রীত হওয়া বই ‘দ্যা অ্যালকেমিস্টের’ বিষয়গত সাদৃশ্যতা খুঁজে পাই। দ্যা অ্যালকেমিস্টের মূল চরিত্র সান্তিয়াগো যেমন সর্বদা নিজের স্বপ্ন প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে অবিচল ছিল ঠিক তেমনি ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’ উপন্যাসের হাজারি ঠাকুরও নিজের একমাত্র স্বপ্ন আজীবন নিজ বুকে লালন করে পরিশেষে তা বাস্তবায়ন করেছেন। আমার বিশ্বাস— দ্যা অ্যালকেমিস্টের ৪৮ বছর পূর্বে প্রকাশিত হওয়া ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’ উপন্যাসটির বিভিন্ন ভাষায় প্রকাশন সারা বিশ্বের বইপ্রেমীদের মন কেড়ে নিবে।
অবসানেঃ
বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের জীবনমুখী উপন্যাস ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’ বাংলা সাহিত্যের একটি অমূল্য কীর্তি। হতাশায় জর্জরিত মানুষকে আমূল পরিবর্তন করে দিতে সক্ষম এই উপন্যাসটি। উল্লিখিত অনুপম দিকগুলো ছাড়াও আদর্শ হিন্দু হোটেল উপন্যাসে আরো নানাবিধ শিক্ষণীয় বিষয় লুকায়িত রয়েছে। অবসানের অবসানে হৃদয় উপচানো একটি কথা বলতে চাই— ‘জীবনে নতুন করে সফল হওয়ার স্বপ্ন বুনতে চাইলে ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’ উপন্যাসটি পড়ার আন্তরিক নেমন্তন্ন রইলো।’