জিপসির পায়ে পায়ে PDF Download (শ্রীপান্থ) – Gypsir Paye Paye Sripantha pdf
Gypsir Paye Paye Sripantha bangla pdf book
- বইয়ের নাম-জিপসির পায়ে পায়ে
- লেখক- শ্রীপান্থে
- বইয়ের ধরন- গবেষণা করা বই
- ফাইলের ধরন- পিডিএফ
- পৃষ্ঠা- 119
- পিডিএফ সাইজ- 10 এমবি
- গুণমান- সেরা, জলছাপ নেই
দুর্দান্ত তথ্যপূর্ণ বই সংগ্রহ করুন – ‘শ্রীপান্থের জিপসির পায়ে পায়ে’ বাংলা বই পিডিএফ ডাউনলোড লিংক- click here
জিপসীর পায়ে পায়ে বই রিভিউ-শ্রীপান্থ
বই : জিপসীর পায়ে পায়ে
লেখক : শ্রীপান্থ
প্রকাশনায় : দে’জ পাবলিশিং কলকাতা
পৃষ্টা সংখ্যা : ১২৮
মূল্য : ৮০ রুপি
জিপসীদের নিজস্ব কোনো নাম নেই। নিজেদের তারা ‘রোম’ বলে জানে। অর্থাৎ মানুষ। কিংবা ‘রোমনিচল’ বা মানুষের সন্তান। এর চেয়ে ভালো পরিচয় আর কী হতে পারে? কিন্তু অন্যরা তাতে তৃপ্ত নয়। তারা জিপসীদের নিজেদের খেয়াল খুশি মতো নাম ধরে ডাকে। জীপসীদের তাই একেক দেশে একেক নাম।
ইউরোপে আসার আগে ওরা কোথায় ছিল সে রহস্য এখনো অজানা। পন্ডিতদের অনুমান, খ্রিষ্টীয় দশম শতক থেকে পঞ্চদশ শতক কেটেছে জিপসীদের নিকট প্রাচ্য পারস্য, তরস্ক এবং গ্রিসে। বালুচিস্তান আর ইরাকে ওদের নাম ‘লুরি’, পারস্যে ‘কাকরি’, আফগানিস্তানে ‘কাউলি’, সিরিয়ায় ‘চিনঘানিজ’ এবং গ্রিসে জিপসীদেন ‘সিগানোস’ নামে ডাকে। ইউরোপের একেক দেশে ওদের একেক নাম। কিছুদিন ওদের চালানো হয়েছিল ‘সারাসিন’ বলে। কখনওবা বলা মকো ‘মুরি’। ষোড়শ শতকে ফ্রান্সে ওদের ডাকা হতো ‘রাবোঁয়া’ বলে।
আশ্চর্য্যের বিষয় হলো- জিপসীদের কাছে অন্যরা কি নামে পরিচিত ছিল? তাদের কাছে দুনিয়ার সবাই ‘গাজো’ কিংবা ‘গাউহো’ নামে পরিচিত ছিল। অর্থাৎ চাষি বা ভূমিদাস। যারা মাটি আঁকড়ে পড়ে থাকে, সারাজীবন পিতৃ ভিটায় কাটিয়ে দেয়, যারা ঘুরতে জানে না তারাই গাজো বা গাউহো।
সে এক বিস্ময়কর, বিচিত্র ইতিহাস। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি শত শত বছর ধরে উড়ে বেড়াচ্ছে দেশ থেকে দেশান্তরে। একই পাখি, একই রং, একই সুর, একই গান। কিন্তু একেকজন তাদের ডাকে একেক নামে। এ যেন এক বেদনা বিদূর নির্মম ইতিহাস। অথচ তারা দিনের পর দিন আপন ডানায় ভর করে, আপন নেশায় ডুব দিয়ে ক্লান্তিহীন, লক্ষ্যহীন, উদ্দাম, অপরিবর্তনীয়। স্বাধীনচেতা মন নিয়ে অনন্তকাল ধরে উড়ে বেড়াচ্ছে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে, প্রতিনিয়ত জোগান দিচ্ছে মানব সভ্যতা বিনির্মাণে অথচ কেউ তাদের খবর রাখে না। মূল্যায়ণ করে না। একটু ভালো নামে ডাকেও না। এ কেমন জীবন!
সংখ্যায় তারা কিন্তু কম নয়। প্রায় কুড়ি লক্ষ। এর মধ্যে রাশিয়াতেই আছে প্রায় দশ লক্ষ। দুই থেকে আড়াই লক্ষ আছে বুলগেরিয়া, রোমানিয়া এবং হাঙ্গেরীতে। যুগোস্লাভিয়ায় আছে প্রায় এক লক্ষ ষোলো হাজার জিপসী। পোল্যান্ড এবং চেকোশ্লোভাকিয়ায় আছে দেড় লক্ষ করে। তুরস্ক এবং গ্রিসে আছে আরো দুই লক্ষ। ইউরোপের অন্যান্য দেশ ফ্রান্স, জার্মানি এবং অস্ট্রিয়াতেও আছে বেশ কিছু সংখ্যক। ব্রিটেনে জিপসী নাকি পঞ্চাশ হাজার। আমেরিকাতেও আছে প্রায় দেড় লক্ষ। এ হিসেব চূড়ান্ত না হলেও জিপসী বা ভবঘুরেদের দুনিয়া সম্পর্কে অনুমানের পক্ষে অবশ্যই সহায়ক। এদের সঙ্গে যদি এদেশের আরো লাখ পঞ্চাশেক যাযাবরকে যোগ করা হয় তাহলে যে চিত্রটি ফুটে উঠে তা অবশ্যই চমকপ্রদ এবং কৌতূহলোদ্দীপক বৈকি!
অথচ কী আজিব ব্যাপার, জিপসীদের কোনো কৌতূহল নেই নিজেদের সম্পর্কে। আমাদের আপন অঙ্গনে ভ্রাম্যমাণ যাযাবরদের মতোই ইতিহাস বিষয়ে সম্পুর্ণ নিস্পৃহ ইউরোপের এই জিপসীরা। ওরা শুধু জানে, ‘ময় হু কালো, মান্ডে হে দাদেসক্রো ওয়াৎস, ময় হো সাচো পাসকেরো রোম’। অর্থাৎ আমি কালো, আমার পিতৃভূমি আছে, আমি একজন সাচ্চা রোম (খাঁটি মানুষ)।
আর ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে জিপসীরা কপাল চাপড়িয়ে শুধু বিলাপ করতে জানে, আঘাত করো আমাকে দেবতা। আঘাত করতে করতে এক্কেবারে মেরে ফেলো না আমাকে। যদি তাই করো, তবে দেখবে তোমার মস্তকে আমার রক্ত।
লেখক শ্রীপান্থ এমনি ভাবে তাঁর চমকপ্রদ লেখনীর মাধ্যমে তুলে এনেছেন জিপসীদের জীবন-মান, আচার-অনুষ্ঠান, সুখ-দুঃখ, জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি যাযাবর জীবনের এক করুণ কাহিনী। লেখক তাঁর প্রাঞ্জল ভাষায় তুলে এনেছেন ওদের প্রেমময় দাম্পত্য জীবনের নানাবিধ রসময় কাহিনী। জিপসীদের সম্পর্কে আরো চমকপ্রদ তথ্য লুকিয়ে আছে শ্রীপান্থের এই ‘জিপসীর পায়ে পায়ে’ বইটিতে। জানতে হলে পড়তে হবে। খুবই রোমাঞ্চকর এবং নির্মম কাহিনীগুলো পাশাপাশি রেখে একই সমান্তরালে এত নিঁখুত ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে যা পড়া শুরু করলে শেষ না হওয়া অবধি উঠতে মন সায় দিবে না।
শ্রীপান্থের লেখা ‘জিপসীর পায়ে পায়ে’ বইটি আমার ফেবারিট তালিকায় সংযুক্ত না করে পারলাম না। দে’জ পাবলিশিং কলকাতা থেকে প্রকাশিত বইটিতে তেমন কোনো ভুল বানান পাই নি। তাছাড়া বাইন্ডিং এবং ছাপানোর মানও ছিল যথেষ্ট প্রশংসনীয়। আমার রেটিং ১০/১০