বই রিভিউ ও ডাউনলোড
গবেষণার দশানন বই রিভিউ
গবেষণার কাজ হচ্ছে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে সঠিক তথ্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরা। আবার অপর দিকে নতুন কিছুর খোজ করাও এক প্রকার গবেষণা। এছাড়া ঐতিহাসিক গবেষণাও রয়েছে যেখানে কি কিভাবে কোথা থেকে এসেছে এটা গবেষণার অংশ।
গবেষণা শুনতে ভাল লাগলেও কাজটি বেশ জটিল এবং সময় সাপেক্ষ। কারণ ইতিহাসে পরিবর্ত না আসলেও পুরাতন তথ্যকে সঠিক ভাবে নির্ণয় করা বেশ কঠিন। তবে এই কাজটি “গোলাম মুরশিদ” খুব সুন্দর ভাবে করেছেন।
বলছিলাম সবাই গবেষণা করতে পারে না। এর কারণ কি? কেন পারে না সবাই গবেষণা করতে। এখানেই হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিষয়, কারণ গবেষণায় উঠে আসা একটি তথ্য সেটা কে যাচাই বাছাই করে সে পর্যন্ত সঠিক তথ্য বের করা সময়ের কাজ।
আমি গোলাম মুরশিদ সম্পর্কে জেনেছি, তবে তার কোন বই পড়া হয়ে ওঠেনি। তবে “রাজু আলাউদ্দিন” এর একটি বই পড়ে শেষ করলাম যেটা গোলাম মুরশিদের সাথে তার সাক্ষাৎকার। বইটি হচ্ছে “গবেষণার দশানন”। দশানন কথাটি যতদূর জানি রাবনের সাথে বলা হয় কারণ তার দশ মাথা।
এই বইটিতে তিনটি সাক্ষাৎকার রয়েছে, যার মধ্যে একটি প্রথম আলো এবং বাকি দুটি বিডিনিউজটুইন্টিফোর ডট কম এ প্রকাশিত হয়েছিল। এই সাক্ষাৎকার গুলোর সম্বলিত রূপ হচ্ছে “গবেষণার দশানন”। বইটি প্রকাশ করেছে বিপিএল।
পড়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমি গোলাম মুরশিদের উত্তর গুলো ভাল ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। তিনি কোন উত্তর সন্দেহ নিয়ে দেননি। অকপটে বলেছেন। যেমন আমরা সত্য বলতে ভয় পাই উনি তেমন নন। উনি বলেছেন, যেটা ভাল লাগেনি সেটা নিয়ে মন্তব্য করেননি।
এই যেমন রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন করলে তার বেশির ভাগ উত্তর ছিল, আমি তো রাজনীতি করি না আর করতেও চাই না। এটা নিয়ে ভাবিও না। এই যে একটা মানুষ তার কাজের মধ্যে ডুবে ছিলেন। আবার যখন ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করা হল তখন দেখলাম তিনি বলেছেন এটাও আমার বিষয় নয়। তাই এটা নিয়ে কিছু বলতেও চাননি।
এখন মনে হতে পারে উনি এড়িয়ে গিয়েছেন। আমিও ভেবেছিলাম প্রথম দিকে, তবে পুরো বইটা পড়ার পর মনে হয়েছে যে না উনি এমনই। যেটা ওনার ভাল লাগেনি বা ওনার বিষয় নয় উনি সে বিষয়ে মন্তব্য করেননি। এটা অবশ্য আজকাল কেউ করে না। উনি ওনার গবেষণা নিয়ে যে সমস্ত তথ্য দিয়েছেন তা রীতিমত অবাক করার বিষয়। কেননা আজকাল গবেষণার জন্য কেউ এত কষ্ট করবে বলে মনে হয় না।
বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত তিন খন্ডের “বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান” এই কাজটি করেছেন ১২ জন মিলে। তাদের তিন বছর সময়ের মধ্যে কাজটি করতে হয়েছে। এই বিষয়ে গোলাম মুরশিদ বলেছেন যে, সময়টি আসলে অপ্রতুল। কারণ আপনি দেখুন ইংলিশ অক্সফোর্ড ডিকশোনারির ২২ ভলিউমের। যার কাজ শুরু হয় ১৮৭৯ সালে এবং শেষ হয় ১৯২৮ সালে মানে পায় ৫০ বছর সময় লেগেছে। এ থেকেই বোঝা যায় তারা কতটা সময় দিয়েছে। আমাদের সমস্যা হচ্ছে কেউ চায় কেউ চায় না। তাই সময়ের মধ্যে থেকেই কাজ করতে হয়েছে।
বইটি পড়ার সময় আমার মনে হয়েছে গবেষণার জন্য মানুষ কতটা পরিশ্রমী হতে পারে। এই যে তিন খন্ডের কাজ শুরু করার সময় বলা হয়েছিল যে এটা নাকি কপি পেস্টের কাজ। কিন্তু গোলাম মুরশিদ সেদিকে জাননি। এখানে তিনি উপত্তি বিস্তার অর্থ সব কিছুকে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন। আবার এও দেখার বিষয় শব্দের অর্থ পরিবর্তন।
যেমন ধরুন ভীষণ, এই শব্দটি বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার হয়েছে। ভীষণ খাওয়া দাওয়া মানে অনেক হচ্ছে। আবার দারূন শব্দটি কঠিন অর্থে ভালো অর্থে সবক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায় যে, শব্দের অর্থের পরিবর্তন এসেছে সময়ের সাথে সাথে। আবার অধ্যক্ষ শব্দের ২৭-২৮টি অর্থ বের হয়েছে। তো বোঝা যায় যে গবেষণার কাজটি কতটা কঠিন। তবে এই কঠিন কাজটি তিনি সুনিপুণ ভাবেই করেছেন।
“গবেষণার দশানন” বই মাত্র ১৩২ পৃষ্ঠার একটি বই। তবে এই সাক্ষাৎকারে অনেক বিষয় উঠে এসেছে যা সত্যি অসাধারণ। আর গোলাম মুরশিদের উত্তর গুলো ছিল অকপটে সত্য বলে যাওয়া। যা আজকাল অনেকেই পারবে না। কিন্তু উনি পেরেছেন। আমার বেশ ভাল ই লেগেছে বইটি পড়ে।