বই রিভিউ ও ডাউনলোড

আরবি গল্পের বই Pdf Download

আরবি গল্পের বই pdf free Pdf Download New Free Bangla Pdf book  Download (পিডিএফ ডাউনলোড), epub, kindle MOBI – শিক্ষামূলক গল্প pdf – শিক্ষনীয় গল্পের বই

link:

Click Here To Download

আর রাহীকুল মাখতুম pdf download – Click Here To Download


আরও পড়ুনঃ 

বই : পথের পাঁচালি
লেখক : বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রকাশনী : প্রিয়মুখ
নামকরণের সার্থকতাঃ মানুষের জীবনকে সর্বদা পথের ভিতর দিয়ে চলতে হয়। কারও পথ মসৃণ, আবার কারও পথ অতি বন্ধুর। পথের পাঁচালি বইটি গ্রামের এক সাধারণ পরিবারকে অতি অসাধারণ করে ফুটিয়ে তুলেছে। যা পড়তে পড়তে বুক আসে ভড়ে, হঠাৎ হঠাৎ খেয়াল হয় দুচোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠেছে। কাশ বোন, রেলগাড়ি, সবকিছু কি অনুভূতিপূর্ণ! তাই পথের পাঁচালি নামটি সত্যিকার অর্থেই গ্রামীণ সাধারণ একটি পরিবারের অনুভূতি ফুটিয়ে তোলা বইয়ের নাম হিসেবে যথার্থ।
বর্ণনাঃ নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের উত্তরপ্রান্তের হরিহর রায়ের ক্ষুদ্র কোঠাবাড়ি ও হরিহর রায়ের আর্থিক অবস্থা নিয়ে শুরু হয় পাঠকনন্দিত উপন্যাস পথের পাঁচালী। প্রথম অংশটুকু পড়েই অক্ষিকোটরে এক সাধারণ গৃহস্থের ও এক ক্ষুদ্র বাড়ির ছবি অত্যন্ত স্পষ্ট ভাবে ভেসে ওঠে। এখানেই বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় এর সবচাইতে বড় সফলতা, তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তার লেখনীতে ফুটিয়ে তোলা কথাগুলোকে পাঠকের হৃদয়েও ফুটিয়ে তোলে, ফলে যেকোন পাঠক তাতে বিমোহিত হতে বাধ্য হয়।
বৃদ্ধা ইন্দির ঠাকরুন যখন জলখাবারে চালভাজার সামান্য গুঁড়াই গোগ্রাসে খেয়ে ফেলে আর পাশে বসে থাকা দুর্গা করুণ চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকে তখন দারিদ্র্যের কষাঘাত এতই নিদারুনভাবে পাঠকমন স্পর্শ করে যে তা মাঘ মাসের হাড়কাঁপানো শীতল বাতাসের ফলে সৃষ্ট হওয়া শারীরিক কষ্টকেও হয়তো হাড় মানিয়ে দিয়ে তারচেয়েও গভীর মানসিক কষ্ট দিয়ে যাবে।
যেদিন রাতে দুর্গার ছোট ভাই পৃথিবীর মুখ দেখল আর দুর্গা তার ভাইয়ের কান্নার আওয়াজকে বিড়াল ছানার ডাক মনে করে ঘুমিয়ে পড়ল তখন, যেকোন পাঠক নিজের ভিতর এক ধরনের মিষ্ট অনুভূতি বোধ করবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে দুর্গা যখন একটি টুকটুকে অসম্ভব রকমের ছোট্ট, প্রায় একটা কাচের বড় পুতুলের চেয়ে কিছু বড় জীবকে তার মায়ের পাশে শুয়ে থাকতে দেখে বুঝতে পারল সেটি তার ভাই এবং হঠাৎই অসহায়, অসম্ভব রকমের ছোট্ট নিতান্ত ক্ষুদে ভাইটির জন্য দুঃখে, মমতায়, সহানুভূতিতে মন পরিপূর্ণ করল তখন শুধু সে একাই নয় এই বইয়ের শত শত পাঠকের মনও একই রকম অনুভূতিতে উতলে উঠে।
সেই ছোট বালকটিকে কেন্দ্র করে হরিহরের নির্জন বাড়িটি আবার মুখর হয়ে ওঠে। মধ্যাহ্নের দুপুরে তার ছোট ছেলেটির তারস্বরে জে_জে_জে_ শব্দে চিৎকার করে যখন উঠোনে বসে থাকা ক্লান্ত নিরীহ চড়ুইটিকে দেখায় তখন হঠাৎই একরাশ মমতা হরিহরের বুকে আঘাত হানে,সাথে আঘাত হানে পাঠক হৃদয়ে। হয়তো দু_একজন আবেগী পাঠককে খুঁজে দেখলে দেখা যাবে সুখের দুই এক ফোটা অশ্রু তাদের নয়নে সিক্ত হয়ে আছে সেই অংশ পড়ে।
ইন্দির ঠাকরুন যখন হরি হরের স্ত্রী সর্বজয়া তাড়িয়ে দেওয়ার পর দুপুরের তপ্ত রৌদ্দুরে পথ শ্রান্তি ও বয়সের ভাড়ে পথ মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন, সর্বজয়ার প্রতি এক ধরনের প্রবল আক্রোশ আমি অনুভব করি। জানিনা এখানে অন্য পাঠকদের মনোভাব ঠিক কি ছিল! ইন্দির ঠাকুরন যখন করুন ভাবে মারা গেল তখন বেদনা অত্যন্ত নির্দয় ভাবে আমার মস্তিষ্ক অধিকার করে বসল, বাঁধা দেওয়ার শক্তিটুকুও দিল না!!
আবার মাতৃরূপী সর্বজয়াকে দেখে পরবর্তীতে সে রাগ নিজের অগোচরেই পড়ে যায়! দুর্গা আর অপু যখন বনের ভিতর খাওয়ার অযোগ্য আশ্শ্যাওড়ার ফলকে খাদ্য হিসেবে উদ্ভাবন করে, তখন প্রকৃতি মাতাকে এক নতুন রুপে আমার আবিষ্কার করতে হয়!
লেখক যেখানে লিখেছেন” বিশ্বের অনন্ত সম্পদের মধ্যে তুচ্ছ বনগাছ হইতে মিষ্টরস আহরণরত এইসব লুব্ধ দরিদ্রঘরের বালক-বালিকাদের জন্য তাই করুণাময়ী বনদেবীরা বনের তুচ্ছ ফুলফল মিষ্টি মধুতে ভরাইয়া রাখেন” সেখানটুকু পরলে আমার বোধ হয়, লেখক যেন বনদেবীর দীর্ঘদিন লুকিয়ে রাখা সত্যকে পরম মমতায় পাঠকের সামনে উন্মোচন করে দিয়েছেন! সে এক অবাক বিস্ময় ও মমতানুভূতি!!
দুর্গা যখন মারা যায় ম্যালেরিয়ার সাথে লড়াই করে তখন বাধ ভাঙা অশ্রু ফেলেছি আমি। কি নিদারুণ নিষ্ঠুর ভাবে পৃথিবীর সাথে বেঁচে থাকার জন্য যুদ্ধ করতে হলো তাকে! এখানেই দারিদ্র্যতা, সামাজিক সমস্যা, মানুষের মনস্তাত্ত্বিক হিনমন্যতা প্রখর ভাবে প্রকাশ করতে পেরেছেন বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়।
সামান্য একটু ভালো ভাব বেঁচে থাকার তাগিদে নিজের জন্ম স্থান, নিজের অতি পরিচিত গ্রামকে বিদায় জানাতে হয় অপুকে। বেঁচে থাকার জন্য দারিদ্র্যতা মানুষকে যেমন মহান করেছে, তেমনি অভিশপ্তও করেছে!! তাই তো নিদারুণ ব্যাথা বুকে চেপে জন্মস্থানকেও ত্যাগ করতে হয়!
সেখানে গিয়ে ভালো থাকতে শুরু করলেও সুখ যে এক অসীম আশ্চর্যজনক বস্তু। সবার কাছে তা ধরা দেয় না। তাদের কাছেও হয়তো সুখ নামক বস্তুটি ধরা দিতে চায়নি। কিছুদিন পরই হঠাৎ এক অসুখে হরিহর মারা যায়। জীবন সংগ্রামে নেমে পড়তে হয় সর্বজয়াকে। এক বিশাল বিত্তশালী পরিবারে কাজের লোকের কাজ নেয় সে। সেখানে প্রতিনিয়ত বঞ্চনার শিকার হয় সে। অপুর নতুন- সহজ-সরল মনে তা গভীর আঁচড় ফেলে। সে তার জন্মস্থান নিশ্চিন্দিপুরে ফিরে যেতে চায়, কিন্তু কোন এক বাঁধা তাকে অদৃশ্য ভাবে বেঁধে রাখে। হয়তো প্রকৃতিই তাকে ঘরছাড়া করতে চেয়েছে! ধীরে ধীরে এগিয়ে চলে তার পথ, তার পথের পাঁচালী।
ব্যাক্তিগত রেটিংঃ বাংলা সাহিত্যের সেরা বইগুলর মধ্যে পথের পাঁচালি নিজের স্থান করে নিয়েছে স্বমহিমায়। বইটি পড়ে সকল পাঠকই আমার মতো তৃপ্ত হয়েছে বলেই তা সম্ভব। অবশ্যই ১০/১০।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button