বই রিভিউ ও ডাউনলোড
সামাজিক উপন্যাসের প্রকৃষ্ট নিদর্শন বই রিভিউ
আলোমতি : মোহাম্মদ অংকন
প্রকাশনায় : কবি প্রকাশনী
প্রথম প্রকাশ : ডিসেম্বর ২০২০
প্রচ্ছদ : মোস্তাফিজ কারিগর
মূল্য : ১৮০ টাকা
আলোমতি : সামাজিক উপন্যাসের প্রকৃষ্ট নিদর্শন
ব্যস্ততম মানবজীবন। অহরহ ঘটছে যেথায় নানা কাহিনি। সমাজজীবনের এমন নানা কাহিনির সমন্বয়ে রচিত হয় সামাজিক উপন্যাস যেখানে প্রাত্যহিক জীবনের বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটে। মোহাম্মদ অংকন’র লেখা সেরকমই একটি উপন্যাস ‘আলোমতি’। রসপূর্ণ সংলাপের পাশাপাশি কর্কশ বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি চিত্রায়িত হয়েছে উপন্যাসটিতে। চরিত্র সৃজনে লেখক যথেষ্ট মুন্সিয়ানার ছাপ দেখিয়েছেন বলে মনে হয়েছে।
প্রেম-ভালোবাসা যে ধর্মের বেড়াজালে আবদ্ধ থাকতে পারে না, তার স্পষ্ট নজির এই উপন্যাস। আবার, নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে পবিত্রতার নামে অপবিত্রতায়
লিপ্ত হলে শেষতক তা নিজের ঘাড়েই পড়ে, সে কথারও জানান দেয় উপন্যাসটি।
অসম্ভব সুন্দরী মেয়ে শ্রীমতি রেখা। অপরদিকে মজবুত চেহারার সুদর্শন যুবক একই গ্রামের দেলওয়ার। রূপবতী রেখাদের বাড়িতে যাত্রাগানের সুবাদে দেলওয়ারের সাথে সখ্যতা গড়ে ওঠে রেখার। ঘনিষ্ঠ রসায়ন তাদের। ভিন্ন ধর্মের যুবক হলেও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই রেখার। তাদের গভীর প্রেম চলতে থাকে।
এদিকে সময়ের পালাবদলে যাত্রার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে এলেও দেলওয়ারের প্রতি রেখার ভালোবাসার কমতি নেই। জীবিকার তাগিদে প্রেমিক শহরে পাড়ি জমাতে চাইলে প্রেমিকাও নাছোড়বান্দা। প্রেমিক হারানোর ভয়ে সাতপাঁচ না ভেবে শহরের বুকে আশ্রয় নেয় দুজনে। দুজনেই জানে, অনিশ্চিত গন্তব্য তাদের, তবুও একসাথে থাকা।
চালচুলোহীন যুবকের প্রেমে বুদ হয়ে মাথা গোজার শেষ আশ্রয় নিজ বাড়ি ত্যাগ করে প্রেমিকের সাথে বসবাস রেখার। প্রেমের টানে ধর্মান্তরিত হয়ে রেখা হয়ে যায় আলোমতি। শহরে অভিনয়ের কাজ না পেয়ে অবশেষে ট্রাক চালকের ভূমিকায় রেখার স্বামী। এখান থেকেই সর্বনাশের শুরু।
ততদিনে আলোমতির পেটের বাচ্চা জন্ম নেওয়ার উপক্রম । মা হওয়ার আনন্দে সে রঙ্গিন স্বপ্ন দেখে। কিন্তু মাদকাসক্ত স্বামীর বেপরোয়া আচরণে ভ্যাবাচ্যাকায় পড়ে সন্তান সম্ভবা আলোমতি। অকূল পাথারে পড়ে সে। নেশাসক্ত স্বামীর অস্বাভাবিক আচরণে কেবলই অন্ধকার দেখতে থাকে সে। গর্ভবতী আলোমতি পাষাণ স্বামীর হাতে নির্মমভাবে খুন হয়। সে মুহূর্তে ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়ে চির ঘুমের ঘরে চলে যায় সে! এদিকে জন্মের পরে নবজাতকের মুখে এক ফোঁটা দুধও ওঠেনি।
নিজ হাতে প্রেয়সীকে খুন করে পরবর্তীতে কিছুটা অনুতপ্ত দেখা যায় দেলওয়ারকে। শ্রীঘরে যাবার ভয়ও পরিলক্ষিত হয় তার মাঝে। শহর ছেড়ে তখন ছোট্ট সোনামণিকে নিয়ে সে আস্তানা গাড়ে নিভূত পল্লীতে। পিতৃস্নেহে বড় হাতে থেকে মেয়েটি। মাতৃস্নেহের অভাব যাতে না টের পায়, তার সব ব্যবস্থাই করে পিতা। মুদি দোকান দিয়ে মেয়েকে আদর্শ মানুষ করে গড়ে তোলার সব চেষ্টাই করে সে। শখ পূরণে মুঠোফোন কিনে দেয় মেয়েকে। বিপত্তির শুরু এখান থেকেই। চোখে চোখে রাখলেও বাবার চোখে ধুলো দিয়ে মেয়ে তন্ময় কুমার নামক ভিনধর্মী প্রেমিকের সাথে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়ে। এমন খবরে বিস্ময়ে হতবাক সে। পাড়ার সর্দার পশুরাম কর্মকারের সালিশে মেয়ের জবাব শুনে পিতার চক্ষু চড়কগাছ। মেয়ের এমন কাণ্ডে প্রশ্নবানে জর্জরিত হতে হয় বাবাকে। সবশেষে মেয়ে আলোমতি প্রেমিকের সাথে অজানা গন্তব্যে পা বাড়ায়।
ধর্মের দোহাই দিয়ে প্রেম-ভালোবাসা আটকানো যায় না। মেয়ের এমন জবাব আর বীভৎস কর্মে অপমান সইতে না পেরে আত্মহননের পথ বেছ নেয় দেলওয়ার। যা দ্বারা প্রতীয়মান হয় নিজের কৃতকর্মের ফল উপভোগ করতে হলো নিজেকেই। এছাড়া দৈনন্দিন জীবনের দৈন্যদশা, মাদকাসক্তিসহ নানাবিধ বিষয় ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। টুকটাক অভাব সব সংসারেই আজকাল লেগে থাকে। এরকম আরো কিছু বিষয়াদি লেখক সুনিপুণ দক্ষতায় প্রতিকৃত করেছেন যা পাঠকমনকে দারুণভাবে উদ্বেলিত করবে বলে আমার বিশ্বাস।