বই রিভিউ ও ডাউনলোড

ওঙ্কার উপন্যাস রিভিউ

BOOK ওঙ্কার
Author
Editor
Publisher
ISBN 9789848966334
Edition 1st Published, 2018
Number of Pages 80
Country বাংলাদেশ
Language বাংলা

পাঠোত্তর পর্যালোচনাঃ আহমদ ছফা’র উপন্যাস ‘ওঙ্কার’

ভিন্নধর্মী বর্ণনাকৌশল আহমদ ছফা’র রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বর্ণনাকে পাঠকের চিন্তার স্রোতের সাথে একাকার করে একটি নির্দিষ্ট বক্তব্যকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে আহমদ ছফা’র জুড়ি নেই। ‘ওঙ্কার’ উপন্যাসে তেমনি একটি প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়।

কাহিনীর শুরু হয়, আত্মকথার ঢং-এ। বাবার সমালোচনায় মুখর ছেলে বর্ণনা করতে থাকে- কিভাবে পূর্বপুরুষের কর্ম-অপকর্মের জের ধরে তাদের পরিবারে নেমে আসে ভয়ানক পরিণতি। এই পরিণতিতে সর্বশান্ত হতে হতেও নাটকীয় ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে ছেলেটাকে বরণ করতে হয় নতুন জীবন।
এই নতুন জীবনের প্রধান ইন্ধন তার বোবা বৌ। আর্থিক টানাপোড়েন ঘুঁচে যাওয়ার পর মনে গহীনে চেপে রাখা রোমান্টিক ইচ্ছেগুলো দানা বাধতে শুরু করে। বৌটা বোবা হওয়ায় তার সাথে দুটো কথা বলার ইচ্ছেকে মাটি চাপা দিতে হয়। কিন্তু ভিন্ন উপায়ে একসময় সে ইচ্ছের প্রতিফলন ঘটে।

বৌটা একটুখানি কথা বলার জন্য, সুর করে গান গেয়ে ওঠার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে। তার সেই শিশুর মত চেষ্টাটিই তার বরের কাছে বড্ড ভালো লেগে যায়। তৃষ্ণার্ত প্রাণ ছেলেটি তার এই বোবা বৌটির কাছেই অফুরন্ত প্রেম সমর্পণ করে।
বোবা বৌটির কথার বলার সংগ্রামের সাথে মিশে একাকার হয়ে যায় স্বাধীনতার সংগ্রাম। চারদিকে অধিকার আদায়ের মিছিল অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মত ছুটে যেতে থাকে। বোবা বউটি কান পেতে শোনে, গোঁ গোঁ শব্দ করতে থাকে, তার ভেতরেও দাউ দাউ করতে থাকে মুক্তির অদম্য ইচ্ছা। একদিকে বৌটির গর্ভে অঙ্কুরিত হয়ে আছে নতুন দিনের মানুষ, অন্যদিকে মিছিলের স্লোগান তার ভেতরে নতুন একটি শব্দের জন্ম দিতে ডাকছে। মিছিলের ‘বাংলাদেশ’ শব্দ তার কণ্ঠে অপরিসীম শক্তি এনে দিয়েছে, প্রাণপণে সে একদিন উচ্চারণ করে ওঠে ‘বাঙলা’।

এই ‘বাঙলা’ ওঙ্কার হয়ে আছে প্রতিটি বাঙালির রন্ধ্রে রন্ধ্রে। ওঙ্কার মানে হলো আদি শব্দ বা আওয়াজ। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের কাছে ‘ওঙ্কার’ হলো তার ভাষা। বাঙালির জন্য তাই বাংলাভাষার যেকোনো উচ্চারণ হলো তার প্রথম ওঙ্কার।
ছোট্ট একটি উপন্যাস ‘ওঙ্কার’। কিন্তু এ ক্ষুদ্র পরিসরেই অসাধারণ দক্ষতায় আহমদ ছফা গড়ে দেখিয়েছেন- জীবনযুদ্ধের টানাপোড়েনের সাথে স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘটনাপ্রবাহের অসাধারণ সমন্বয়। এরকম সমন্বয় খুব কম লেখকের লেখনীতেই ধরা পড়ে।

আহমদ ছফা উপন্যাসটিকে এতো ছোট্ট পরিসরেই ক্যানো শেষ করে আনলেন জানি না- চাইলে কি বর্ণনার পরিধী আরও দীর্ঘ, আরও বিস্তৃত করা যেতো না! অবশ্য এ ক্ষুদ্র পরিসরও ভিন্ন এক সৌন্দর্য এনে দিয়েছে উপন্যাসটিকে। উপন্যাসটি শেষ করে পাঠকের মনে হবে, অনেককিছু বুঝি বলার বাকি রয়ে গ্যালো, অনেক কথা য্যানো চাপা রয়ে গ্যালো- বোবা মেয়েটির বুকচাপা অভিমানের মত। উপন্যাসটি য্যানো দুয়েক কথায় হাজার কথা অবতারণার সুযোগ করে দিয়ে গ্যালো। আহমদ ছফা’র উপন্যাসের বোবা বৌটির উচ্চারিত ‘বাঙলা’ য্যানো হয়ে রইলো প্রতিটি বাঙালির ‘ওঙ্কার’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button