বঙ্গবন্ধুর জীবনী সংক্ষেপে রচনা
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ১০০ শব্দের রচনা – বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচনা প্রতিযোগিতা ২০২০ – বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচনা প্রতিযোগিতা ২০২১ – বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাজীবন রচনা – বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাজীবন শুরু হয় কোন স্কুলে – চেতনায় বঙ্গবন্ধু রচনা – আমি ও আমার মুজিব রচনা – মুজিব শতবর্ষ রচনা বাংলা
১০০ শব্দের বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচনা প্রতিযোগিতা
ভূমিকা (Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman summary): দেশমাতৃকার বরেণ্য সন্তান মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। এদেশের মানুষকে তিনি প্রাণ দিয়ে ভালােবাসতেন। কৃষকের ঘরে তাঁর জন্ম বলে কৃষক, শ্রমিক, খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের দুঃখ-বেদনা আপন হৃদয় দিয়ে তিনি অনুভব করতে পেরেছিলেন। আর পেরেছিলেন বলেই এদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানাের জন্যে তিনি আমৃত্যু সংগ্রাম করে গেছেন। দেশ ও জাতির উন্নতির জন্যে তিনি নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে গেছেন।
জন্ম পরিচয়: ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গােপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতার নাম সাহেরা খাতুন।
বাল্যকাল ও শিক্ষাঃ বাল্যকালে তিনি ছিলেন প্রতিবাদী, সাহসী ও কর্মচঞ্চল। তিনি দুচোখ ভরে বাংলার প্রকৃতিকে দেখতেন। অনেক সময় তিনি নীলাকাশে উড়ে যাওয়া মুক্ত পাখির দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন। চাষীদের কঠোর পরিশ্রম, মজুরের কষ্ট দেখে তিনি হৃদয়ের ভিতর গভীর এক কম্পন অনুভব করতেন। তাই তিনি সুখী ও সমৃদ্ধশালী সােনার বাংলা গড়ে তােলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষাজীবন শুরু হয় গ্রামের গীমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাইমারী স্কুলের পাঠ সমাপ্ত করে শেখ মুজিবুর রহমান গােপালগঞ্জ মিশন হাই স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ১৯১৪ সালে এন্ট্রান্স পাস করেন। এই স্কুলে একবার হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দী এসেছিলেন। তার সংস্পর্শে এসে রাজনীতির প্রতি অনুরক্ত হয়ে উঠেন। ১৯৪৪ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে আই. এ. ও ১৯৪৬ সালে একই কলেজ থেকে বি.এ. পাস করেন। এ সময় থেকে তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়াকালে তিনি পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রামে। লিপ্ত হন। ১৯৪১ সালে পাকিস্তান সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে। ফলে তাঁর আইন পড়া সম্ভব হয়নি।
শেখ মুজিব ও স্বাধীনতা সংগ্রাম (Sheikh Mujibur Rahman Paragraph): পাকিস্তান সৃষ্টির কিছু দিন পরেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, আসলে আমরা যাধীন নই।। ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা বাংলা ভাষাকে অবজ্ঞা করে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘােষণা করা হয়। তখন শেখ মুজিবের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে শুরু হয় পাকিস্তান বিরােধী আন্দোলন। বঙ্গবন্ধুকে এসময় কারারুদ্ধ করা হয়। ১৯৫৩ সালে শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন এবং শেরে বাংলার সাথে মিলিত হয়ে ‘যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের কাছে মুসলিম লীগ পরাজিত হয়। শেখ মুজিব যুক্তফ্রন্ট সরকারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হন। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকচক্র এ সরকার ভেঙ্গে দেয়। বাঙালিদের উপর নেমে আসে। অত্যাচারের স্টিমরােলার। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি হলে বাঙালিরা অধিকার হারা হয়ে পড়ে। শেখ মুজিব সেই হারানাে অধিকারকে ফিরিয়ে আনার জন্যে শুরু করেন সংগ্রাম। পাকিস্তানের দুটি অংশের বৈষম্য এমনি প্রকট আকার ধারণ করল যে, উচ্চ পদে চাকরির ক্ষেত্রে আমরা ১৫%-এর বেশি নিয়ােগ পেতাম না। এবং জাতীয় আয়ের সিংহ ভাগ ব্যয় করা হত পশ্চিম পাকিস্তানে। এসবের প্রতিবাদে শেখ মুজিব দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তােলেন। ১৯৬৬ সালে জননেতা হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লিগের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি বাঙালি জাতির মুক্তির জন্যে মুক্তি সনদ ছয়-দফা দাবি পেশ করেন। আইয়ুব সরকার শেখ মুজিবকে অস্ত্রের ভাষা প্রয়ােগ করলেন। অত্যাচার আর শােষণের মাত্রা বেড়ে গেল কয়েক গুণ। শেখ মুজিবকে প্রধান আসামী করে “আগরতলা ষড়যন্ত্র” নামে একটি মিথ্যা। মামলা দায়ের করা হয়। সারা দেশে মুজিবের মুক্তির জন্যে গণআন্দোলন শুরু হয়। ‘৬৯-এ সেই গণআন্দোলন “গণঅভ্যুথানে” রূপ নিল। আগরতলা মামলা তুলে নিতে বাধ্য হলেন আইয়ুব সরকার। সারা দেশে প্রবল আন্দোলনের মুখে আইয়ুব খান ইয়াহিয়া খানের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগ বিপুল ভােটে জয় লাভ করল। কিন্তু পাকিস্তানি ক্ষমতালােভী সরকার বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে রাজী হলাে। না। শেখ মুজিব ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রমনার রেসকোর্স ময়দানে দৃপ্ত কণ্ঠে ঘােষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সশ্যাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” এ সগ্রাম যখন চরম রূপ ধারণ করে তখন বর্বর ইয়াহিয়া সরকার ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত ১২টা থেকে নিরস্ত্র বাঙালি জাতিকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সশস্ত্র আক্রমণ শুরু করে। ঐ রাতে বঙ্গবন্ধু বন্দি হন। গ্রেতার হওয়ার আগে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বালাদেশের স্বাধীনতার ঘােষণা দেন। শেখ মুজিবকে পাকিস্তানের কারাগারে আটক রাখা হয়। এরপর আরম্ভ হয় দুর্বার প্রতিরােধ সংগ্রাম। গ্রামে-গঞ্জে গঠিত হয় মুক্তিবাহিনী, শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয় এদেশের আপামর জনগণ, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, শিক্ষক এবং সকল পেশাজীবী। 3 দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধ চলে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ কমাণ্ডের কাছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অ্যুদয় ঘটে।
চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য: বাঙালি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা ও সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের মূর্ত প্রতীক ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব, জেদী, দৃঢ় মনােবল ও সাহসই তার চরিত্রকে বৈশিষ্ট্যময় করে তুলেছে। তার সম্পর্কে মতিউর রহমান বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন একজন আবেগপ্রবণ ও সহানুভূতিশীল মানুষ। শত্রুর প্রতিও তার মনােভাব ছিল উদার। গুরুতর অপরাধ করলেও তিনি অপরাধীকে অবলীলাক্রমে ক্ষমা করে দিতেন।” তিনি ছিলেন একজন যাদুকরী বক্তা। তার ভাষণ শুনে সবাই মুগ্ধ হয়ে যেত। এজন্যে তিনি “বজ্রকণ্ঠ” বলে পরিচিত ছিলেন। অন্যায়, অবিচার, শােষণ ও জুলুমের সাথে তিনি কোনাে দিন আপােষ করেন নি। তাঁর মানবিক অনুভূতি, উদারতা, মানুষের প্রতি ভালােবাসা তাকে কঠিন হতে দেয়নি। শান্তি প্রতিষ্ঠার অবদানের জন্যে তিনি আন্তর্জাতিক “জুলিও কুরি” শান্তির পদক লাভ করেন।
মৃত্যুঃ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কতিপয় সেনাবাহিনীর একটি ক্ষুদ্র অংশ তাকে সপরিবারে হত্যা করে।
উপসংহারঃ বঙ্গবন্ধু শুয়ে আছেন টুঙ্গিপাড়ায়। আর কোনােদিন ফিরবেন না বাঙালিদের দুঃখ শােনার জন্যে। কিন্তু তিনি মরেও অমর হয়ে আছেন। আমাদের মনের মণিকোঠায় তিনি স্থান করে নিয়েছেন। যতদিন পদ্মা-মেঘনা-যমুনা বহমান থাকবে, যতদিন যাধীন বাংলাদেশের পতাকা পতপত করে উড়বে ততদিন দেদীপ্যমান থাকবে একটি নাম শেখ মুজিবুর রহমান।