বই রিভিউ ও ডাউনলোড

আরণ্যক বই ডাউনলোড ও রিভিউ

আরণ্যক বই ডাউনলোড – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় pdf free download – Aranyak by Bibhutibhushan Bandopadhyay pdf

এই বই পড়ার পর মনে হতো আমিও যদি যেতে পারতাম স্বরসতী কুন্ডীর ধারে, মোহনপুরা রিজার্ভ ফরেস্টে। অথবা জোৎস্না রাতে যদি ঘোড়া ছুটিয়ে বুনো ঘাসের জঙ্গল পাড়ি দিতে পারতাম। এই অবাধ বুনো জীবন যে কাউকে আকৃষ্ট করবে। প্রকৃতির এত সুন্দর বর্ণনা মনে হয় আর কোনো লেখক দিতে পারেনি।

Book আরণ্যক pdf
Author
Publisher
ISBN 9789849175636
Edition 1st Published, 2018
Number of Pages 204
Country বাংলাদেশ
Language বাংলা
‘ মানুষ কী চায় – উন্নতি, না আনন্দ? ‘
খুব সুন্দর এবং জটিল একটি লাইন। উন্নতি দিয়ে কী হবে যদি সেখানে আনন্দ না থাকে! লাইনটি একটি বইয়ের। বইয়ের নাম আরণ্যক। গত পরশু রাতে বইটি পড়া শেষ করলাম।
উত্তম পুরুষে লেখা। পূর্নিয়া জেলার একটি জঙ্গলে চাকরির সুবাধে লেখক যান। সেখানে প্রায় ৩০ হাজার বিঘের জঙ্গলের দায়দায়িত্ব তার উপর দেওয়া হয়। নতুন প্রজা দ্বারা বন্দোবস্ত করতে হবে।
সেখানকার লোকজন বড্ড গরিব। সভ্যতার ছোঁয়ার ধারেকাছেও পৌছায়নি। দিনের পর দিন বহু অভাব আর সীমাবদ্ধতা নিয়ে বসবাস করে আসছে।
প্রথম প্রথম জঙ্গল লেখককে টানেনি। এতো গরিব মানুষ হতে পারে তা এই জঙ্গলে না আসলে জানা যেতো না। তাছাড়া ভাষার সমস্যা তো ছিলোই।
ভাত খুব দুস্প্রাপ্য খাবার সেখানকার লোকজনের জন্য। সাপ্তাহে বা মাসে কেউ কেউ ভাত খাওয়ার সুযোগ পায়। যাদের আর্থিক অবস্থা কিছুটা ভালো তারা ভাত খাওয়ার কিছুটা সুযোগ পায়।
ধীরে ধীরে জঙ্গলের মোহ লেখককে পেয়ে বসে। নির্জনতা, অপরাহ্নের সিঁদুর ছড়ানো বনঝাউ, দিগন্তব্যাপি বিশাল বনপ্রান্তর, অবাধ স্বাধীনতা সব মন কেড়ে নেয়।
একে একে আগমন ঘটে গনু মাহাতো, মুনেশ্বর সিং, নন্দাপাল ওঝা, জওয়াহিরলাল, বিশুয়া, রামজোত, ধাওতাল, জয়পাল, কুন্তা, মাহাতো, ছটু সিং, নকেছদী,ভানুমতী, সুরতিয়া, রাজু পাঁড়ে, মুনেশ্বর সিং, ঝল্লু, রাজা দোবরু, মঞ্চী এবং আরো অনেক অনেক চরিত্র।
বই পড়তে পড়তে সবাই কেমন আমারো আপন হয়ে উঠেছিল। লেখক যখন ৬/৭ বছর শেষে সেই চাকরি ছেড়ে নিজের শহরে ফিরে আসে তখন আমিই গন জঙ্গল, নীলগাই, বন্যমহিষ, জঙ্গলের জোৎস্না, বনমোরগের ডাক, বনে হুড়ালের ডাক, হাতিরপাল, হায়েনার ডাক ইত্যাদি মিস করছিলাম।
aranyak pdf 935
aranyak pdf 935
এই জঙ্গলের মেয়েরা বড্ড সরল এবং স্নেহময়ী। মনের দিক থেকে খুব সহজে আপন করে নেয় সকলকে। অপরিচিত এক বাঙালি বাবুর প্রতি যুবতী ভানুমতী যে শ্রদ্ধা, আন্তরিকতা প্রদর্শন করেছে লেখকদের ভাষ্যমতে শহরে যতই আধুনিকতা আসুক বাড়িতে আগত কোন প্রাপ্ত বয়স্ক যুবক অতিথির সাথে এতো সারল্য এবং স্বাভাবিকতা নিয়ে বাড়ির যুবতীরা মিশতে পারে না।
মনের দিক থেকে নেগেটিভ কোন চিন্তা ভাবনা তাদের আড়ষ্ট করে রাখে। কিন্তু এই জঙ্গলে সেই আড়ষ্টের লেশমাত্র নেই।
ভানুমতীকে লেখকের ভালো লাগে। শেষের দিকে মনে হয় যদি ভানুমতীকে বিয়ে করা যেতো! যদি এই জঙ্গলে ভানুমতীর সাথে ঘর বাঁধা যেতো!
ভানুমতীর মনেও কি বাঙালি বাবু জায়গা করে নেয়? জানতে হলে বই পড়তে হবে।
জঙ্গলের বেশিরভাগ মানুষের খাদ্য খেড়ির দানা সিদ্ধ, বাথুয়া শাক সিদ্ধ, মকাই সিদ্ধ, ফাগুন মাসে গুড়মি ফল, বন্য আতা, বন্য কুল, সজারু, বন্য মোরগ, মহিষের ঘি, দুধ আর খোয়া ইত্যাদি।
এমন গরিবও আছে যারা মাসের পর মাস ভাত খেতে পায় না। সেখানকার জমিতে ধান জন্মায় না। অন্য জায়গা থেকে চাল কেনার কথা কল্পনাও করতে পারে না।
বই না পড়লে আসলে জঙ্গলের সেই জাতির জীবনযাপন, আনন্দ – বেদনা অনুভব করা যাবে না।
জঙ্গলের রূপ – বৈচিত্র কল্পনায় নিয়ে আসা যাবে না।
তবে বইয়ের বেশিরভাগ জায়গা আমার কাছে স্লো মনে হয়েছে। অবান্তর লেগেছে কিছু কিছু প্যারা, কিছু কিছু জায়গায় মনে হয়েছে বর্ননা দেওয়ার সময় বড্ড তাড়াহুড়ো করেছে।
সর্বোপরি আমি সন্তুষ্ট। বেশ ভালো একটি বই। যারা বন – জঙ্গল পছন্দ করেন বা আগ্রহ আছে তারা মাস্ট বইটা পড়বেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button